ঢাকা বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

উন্নতির পূর্বাভাস, তবুও কাটেনি বন্যার শঙ্কা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৫:৫৫ পিএম
দেশে বিভিন্ন এলাকায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি- সংগৃহীত

কয়েকদিন ধরেই উজানের ঢল ও অতি ভারি বৃষ্টিপাতে বেড়েছে দেশের নদ-নদীর পানি। কোথাও কোথাও পানি প্রভাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। ফলে বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

তবে এই অবস্থার উন্নতি দেখছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। যদিও সংস্থটি বলছে, নতুন করে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে। অর্থাৎ বন্যার আশঙ্কা এখনো কাটছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেট কুশিয়ারা নদী অমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার এবং সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হানের স্বাক্ষরিত সবশেষ (বুধবার সন্ধ্যা ৬টা) তথ্য বলছে, বর্তমানে তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে পানি প্রভাহিত হচ্ছে।

এগুলো হলো- সুরমা নদীর কানাইঘাট (সিলেট) পয়েন্ট +০৩ সে.মি; কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ (সিলেট) পয়েন্ট +৬৩ সে.মি; এবং কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ (সিলেট) পয়েন্ট +০২ সে.মি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
 

তবে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের সতর্কবার্তায় এও বলছে, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

এ সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহে বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। যদিও পরবর্তী ২ দিন পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।

আর রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃদ্ধি পেতে পারে। এ সময়ে তিস্তা ও দুধকুমার নদীসমূহ বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং ধরলা নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।

এ সময়ে লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে। তবে পানি সমতল ২য় ও ৩য় দিন হ্রাস পেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।

এ ছাড়াও সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সোমেশ্বরী, সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, ভুগাই, কংস ও জিঞ্জিরাম নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ১ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুর জেলাসমূহে নদীসমূহ সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।

চার বিভাগে অতি ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

তবে ২য় দিন নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং ৩য় দিন পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৫ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

সেই সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি সমতল আগামী ২ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে ও পরবর্তী ৩ দিন হ্রাস পেতে পারে; অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল আগামী ৫ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে।

তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মহানন্দা, করতোয়া, ঘাঘট, আত্রাই, যমুনেশ্বরি, আপার আত্রাই, আপার করতোয়া, পুনর্ভবা ও টাঙ্গন নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ১ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ২য় ও ৩য় দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। 

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু স্থানে এবং উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম ও অরুণাচল  প্রদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়েছে।

পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়, মহেশখোলা (সুনামগঞ্জ) ১১২ মি.মি., সুনামগঞ্জ ৯০ মি.মি., দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) ৮৮ মি.মি., ফেনী ৬০ মি.মি. এবং পাসিঘাট (আরুণাচল প্রদেশ) ১৩৯.০ মি.মি., চেরাপুঞ্জি (মেঘালয়) ৯১.০ মি.মি., কোচবিহার (পশ্চিম বঙ্গ) ৬৩.০ মি.মি., গোহাটি (আসাম)) ৫৮.০ মি.মি.) বৃষ্টিপাত হয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা (১৭ সেপ্টেম্বর ৯টা থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর ৯টা পর্যন্ত) দেশের রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, বিহার ও ত্রিপুরা প্রদেশে মাঝারি ভারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

চার বিভাগে অতি ভারি বৃষ্টির শঙ্কা

এদিকে দেশের চার বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আবহওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। ফলে দেশের চার বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।

এ দিন রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এ দিন সারা দেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের দৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এ দিন সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

আগামী শুক্রবারের (১৯ সেপ্টেম্বর) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।

আগামী শনিবারের (২০ সেপ্টেম্বর) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে। বর্ধিত ৫ (পাঁচ) দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে।