মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসেলে মেরিন ওয়ানে পৌঁছেছেন। এ সময় ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস, রানি ক্যামিলা ও ওয়েলসের যুবরাজ ও রাজকুমারী তাদের অভ্যর্থনা জানান। পরবর্তীতে রাজপরিবারের সদস্যরা হাউসহোল্ড ক্যাভালরি মাউন্টেড রেজিমেন্টের সঙ্গে ঘোড়ার গাড়িতে প্রাঙ্গণ পরিদর্শন শুরু করেন।
ট্রাম্পের লন্ডন সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারের মধ্যে বিভিন্ন বাণিজ্য আলোচনার পরিকল্পনা চলছে। উভয় দেশ প্রযুক্তি এবং বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত কয়েকটি চুক্তি ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ব্রিটিশ নেতারা ধাতব শুল্ক নিয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করার আশা করছেন।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য ট্রাম্পকে সর্বাধিক স্বাগত জানানো, যা কার্যকর দেখাচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে তিনি ফার্স্ট লেডি মেলানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সরকারি বাসভবনে হেলিকপ্টারে পৌঁছান।
ট্রাম্প বলেন, ‘এখানকার অনেক কিছুই আমার হৃদয়কে উষ্ণ করে তোলে।’ কারণ তার মা স্কটল্যান্ডের অধিবাসী ছিলেন এবং যুক্তরাজ্যে দুটি গলফ কোর্স রয়েছে। তিনি ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন ৭৬ বছর বয়সি রাজা চার্লসকে ‘বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তবে যুক্তরাজ্যের জনমত ট্রাম্পের প্রতি নেতিবাচক। উইন্ডসরের সরাসরি সম্প্রচারে সিএনএনের প্রধান আন্তর্জাতিক উপস্থাপক ক্রিশ্চিয়ান আমানপুর বলেন, রাজা চার্লস সম্ভবত এই সফরে দীর্ঘদিনের আগ্রহের বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করবেন। আমানপুর বলেন, এটি ট্রাম্পকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে পুনরায় যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে আলাপের একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হবে।
উইন্ডসর থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক মিলেনা ভেসেলিনোভিচ জানান, ট্রাম্পের এই রাষ্ট্রীয় সফর ‘অবশ্যই অভূতপূর্ব’। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার আশা করছে রাজপরিবারের সঙ্গে মেলামেশা ও আনুষ্ঠানিকতা ট্রাম্পকে ভালো মেজাজে রাখবে, বাণিজ্য আলোচনায় আরও নমনীয় করবে এবং কিছু বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে স্টারমারের কথার প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলবে।
তবে ট্রাম্পের সফর রাজনৈতিক বিতর্কও তৈরি করেছে। ২০১৯ সালে নিউ ইয়র্কের একটি কারাগারে আত্মহত্যা করা দোষী সাব্যস্ত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টাইনের সঙ্গে যুক্ত কূটনীতিক সংযোগের কারণে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত পিটার ম্যান্ডেলসনকে বরখাস্তের পর কিয়ার স্টারমার দেশে রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হয়েছেন। ট্রাম্পকেও এই বিতর্কে টানা হয়েছে— তার ‘মাগা’ সমর্থকরা এটিকে ‘প্রতারণা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
মঙ্গলবার স্টপ ট্রাম্প কোয়ালিশনের কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী উইন্ডসর দুর্গের বাইরে সমাবেশ করেন। টেমস ভ্যালি পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় এক হাজার বছরের পুরনো দুর্গে ট্রাম্প ও এপস্টাইনের ছবি সাঁটানোর পর চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার লন্ডনে আরও বড় বিক্ষোভের সূচনা হয়েছে।
সফরের আগে লন্ডনের মুসলিম মেয়র সাদিক খান মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্প ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে বিভাজনমূলক, চরম ডানপন্থি রাজনীতির আগুন জ্বালানোর ক্ষেত্রে অন্য যে-কাউকে ছাড়িয়েছেন।’ তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্কের বাস্তব কারণ থাকলেও যুক্তরাজ্যকে ট্রাম্প সমালোচনা করতে ভয় পেতে হবে না।
সাদিক খান উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে, ‘একজন অপরের প্রতি খোলামেলা ও সৎ থাকা’ এবং মাঝে মাঝে এর অর্থ একজন সমালোচককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা ও ক্ষমতার কাছে সত্য কথা বলা। ২০১৯ সালের ট্রাম্পের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরের সময় খান প্রকাশ্যে তার সঙ্গে বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়েছিলেন।