ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন, ২০২৫

‘প্রায় ১ বছর বেতন ছাড়া কাজ করে এখন শুনি চাকরি নাই’  

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
আন্দোলন করছেন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ছবি- সংগৃহীত

২৩ বছর ধরে সরকারি হাসপাতালের ময়লা পরিষ্কার করছেন ঝর্ণা রক্ষিত। কিন্তু আজও চাকরি স্থায়ী হয়নি তার। এমনকি বেতনও পান না ১১ মাস ধরে। এতদিন বেতন ছাড়াই কাজ করে এখন শুনছেন চাকরিই আর নেই।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত ঝর্ণার মতো এমনই মানবিক সংকটে আছেন আরও ৫৩ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তারা কেউ ৫, কেউ ১০, কেউবা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। অথচ কোনো সময়েই চাকরি স্থায়ী হয়নি, পাননি সরকারি সুযোগ-সুবিধাও।

ঝর্ণা রক্ষিত বলেন,  প্রায় ১ বছর বেতন ছাড়াই কাজ করছি। এখন শুনি চাকরিই নাকি নাই। 

অন্য ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি বরাদ্দে একজন আউটসোর্সিং কর্মচারীর বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ২১,৫৫০ টাকা। অথচ বাস্তবে তারা পেয়েছেন মাত্র ৮ হাজার টাকা, তাও অনিয়মিতভাবে। পরে নিয়োগ পাওয়া ২৯ জন আউটসোর্সিং কর্মীকে কোনো বেতনই দেওয়া হয়নি। তারা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে দৈনিক ১০-২০ টাকা সংগ্রহ করে জীবন চালিয়েছেন।

একজন কর্মচারী বলেন, ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম ৩২০০ টাকা বেতন দিতেন। পরে আন্দোলনে বেতন ৬ হাজার টাকা হয়। এরপর স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী শরীফ উল্যাহ এসে বেতন বাড়ান ৮ হাজারে। কিন্তু সরকারের পতনের গুঞ্জনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় সেই সামান্য বেতনটুকুও। 

দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ না হওয়ায় কর্মীরা একাধিকবার আন্দোলন করেছেন। কিন্তু অবশেষে ২ জুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আপনাদের চাকরি নেই, বরাদ্দও নেই।

 

এতে চরম হতাশায় ভেঙে পড়েছেন কর্মীরা। কেউ সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছেন, কেউ বাড়িভাড়া দিতে না পেরে বাসা ছাড়ার হুমকিতে রয়েছেন।

বিবি কুলসুম নামের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কথায়, ভাত খাওয়ার যে হাত, সেই হাত দিয়েই মানুষের বাথরুম পরিষ্কার করি। তবুও আমাদের সম্মান নেই, বেতন নেই, চাকরিও নেই।

এই সংকটের বিষয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. কামরুজ্জামান বলেন, আউটসোর্সিংয়ের কর্মীদের বিষয়ে নতুন করে কোনো বরাদ্দ নেই। মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এদের আর না নেওয়ার জন্য। আমাদের কিছু করার নেই। তারা চাইলে থাকতে পারেন, না চাইলে যেতে পারেন।