সারা বছর নৌকাডুবির খবরে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় থাকে ইতালি। এসব দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার সংখ্যাও কম নয়। তবুও দেশটিতে কমছে না অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা। বরং গত বছরের তুলনায় এ বছর ইতালিতে অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমুদ্রপথে ইতালি পৌঁছেছেন ৩৮ হাজার ২৬৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। দেশটিতে অভিবাসীদের পৌঁছানোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা।
সবশেষ ইতালির দক্ষিণ সার্ডিনিয়ায় আটজন অভিবাসীকে নিয়ে একটি নৌকা ডুবে গেছে। এ ঘটনায় গত শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে সান্ত’আন্তিওকোর কাছের উপকূল থেকে এক অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে একজনকে।নিখোঁজ অভিবাসীদের খোঁজে সোমবারও (১১ আগস্ট) উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছিল ইতালি। এতে অংশ নিচ্ছে ইতালির ফিন্যান্স গার্ডের টহল নৌকা এবং একটি হেলিকপ্টার, কোস্টগার্ডের কয়েকটি টহল নৌকা। সার্ডিনিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের সান্ত’আন্তিওকো এলাকায় উপকূলেই তারা তল্লাশি করছিলেন।
৯ আগস্ট ফিন্যান্স গার্ডের একটি বিমান সমুদ্রে এক অভিবাসীর মরদেহ শনাক্ত করার পর অনুসন্ধান শুরু হয়। গত কয়েকদিনে ৩৪ জন অভিবাসী সমুদ্রপথে সার্ডিনিয়ায় পৌঁছেছেন। রোববার সন্ধ্যায় সান্ত’আন্তিওকোতে পৌঁছেছেন ৯ জন অভিবাসী। ওইদিন আরো ১২ জনকে সান্ত’আন্না আরেসির পৌরসভার পোর্তো পিনোর সমুদ্র সৈকত থেকে উদ্ধার করা হয়। তার আগে আরো ১৩ জন তেউলাদা বন্দরে পৌঁছেছেন। এই ৩৪ অভিবাসীকে কাগলিয়ারি প্রদেশের মোনাস্তির আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এছাড়া ইতালির একেবারে দক্ষিণ প্রান্তের ছোট দ্বীপ লাম্পেদুসাতেও অভিবাসীদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। রোববার (১০ আগস্ট) দ্বীপটিতে পৌঁছেছেন ৫৮ জন অভিবাসী। তাদের মধ্যে দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেক্স এবং ফিন্যান্স গার্ডের টহল নৌকা তাদের উদ্ধার করেছে। অভিবাসীদের মধ্যে মিসরীয়, ইরিত্রীয়, সিরিয়ান এবং ইরানি নাগরিকরা রয়েছেন। শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ২টায় তারা লিবিয়ার জুওয়ারা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেন।
এছাড়া ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধারের পর ১৪৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ইতালির সাভোনায় পৌঁছে দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ইমার্জেন্সির অভিবাসী উদ্ধারকারী জাহাজ লাইফ সাপোর্ট। রোববার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় লিগুরিয়া অঞ্চলের সাভোনা বন্দরে পৌঁছায় জাহাজটি।
এর আগে ৬ ও ৭ আগস্ট ভূমধ্যসাগরে তিনটি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে লাইফ সাপোর্ট। প্রথম উদ্ধার অভিযানে একটি ছোট নৌকায় গাদাগাদি অবস্থায় থাকা ৩১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়। লাইফ সাপোর্ট বলেছে, তাদের মধ্যে একজন সন্তানসম্ভবা নারী এবং ১১ জন সঙ্গীবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন।
দ্বিতীয় নৌকাটিতেও তার আকারের তুলনায় বেশি যাত্রী ছিলেন। নৌকাটিতে ৪৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী থাকলেও তাদের কারও শরীরে কোনও লাইফ জ্যাকেট ছিল না। তাদের মধ্যে তিন জন ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক।
তৃতীয় অভিযানটি অপেক্ষাকৃত চ্যালেঞ্জিং ছিল বলে জানিয়েছে ইমার্জেন্সি কর্তৃপক্ষ। ফাইবারগ্লাসের তৈরি নৌকায় ছিলেন ৬৯ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। লাইফসাপোর্ট জাহাজটিকে দেখা মাত্র সর্বোচ্চ গতিতে অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে নৌকাটি জাহাজের দিতে এগোতে থাকে। লাইফসাপোর্টের কাছাকাছি আসতেই নৌকার চালকেরা অভিবাসীপ্রত্যাশীদের উদ্ধারকারী জাহাজে লাফিয়ে পড়তে বলেন। এসময় কিছু অভিবাসী পানিতে পড়ে যান। তাদের কারো শরীরে কোনো লাইফজ্যাকেট ছিল না।
এই তিন অভিযানে উদ্ধার হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি ছিলেন সুদানের নাগরিকরা। এরপরই রয়েছেন আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, বুরকিনা ফাসো, ক্যামেরুন, আইভরি কোস্ট, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, ঘানা, গিনি, মালি, নাইজেরিয়া, সেনেগাল এবং সোমালিয়ার নাগরিকরা।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ইতালিতে সমুদ্রপথে আসা অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৬৪৪ জন। কিন্তু এ বছর তা কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৩৮ হাজার ২৬৩ জন। তবে ২০২৩ সালে একই সময়ে রেকর্ড ৯৯ হাজার ৫২২ জন অভিবাসী এসেছিলেন।
এদিকে চলতি বছর আসা অভিবাসীদের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। ১২ হাজার ৮৬ জন বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছেছেন। এরপরই আছে ইরিত্রিয়া। দেশটির পাঁচ হাজার ২১৫ জন নাগরিক পৌঁছেছেন ইতালিতে। আর এরপরে আছে মিসর, পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, সুদান ও সোমালিয়ার নাম।