বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম

দেবতাখুম

হারিয়ে যাওয়ার এক রহস্যময় জলপথ

হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম

হারিয়ে যাওয়ার এক রহস্যময় জলপথ

ছবি: সংগৃহীত

মাঝে মধ্যে শহর ছেড়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। ইট-কাঠের এই বন্দিদশা, কংক্রিটের বিষণ্ন দেওয়াল, যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্ত শব্দ; সবকিছু পেছনে ফেলে কিছুক্ষণের জন্য মুক্ত বাতাসের গন্ধ নিতে ইচ্ছে করে। পাহাড়ের কোলে হারিয়ে যাওয়া, নদীর কলতান শোনা, কিংবা এমন কোনো জায়গায় পা রাখা, যেখানে সময় যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। করে না ইচ্ছে? 
তবে আর দেরি কেন? চট করে ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ দেবতাখুম থেকে। যাওয়ার আগে আফরিন জাহানের লেখায় জেনে নিন বিস্তারিত-

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার গভীরে লুকিয়ে থাকা দেবতাখুমকে বলা হয় বাংলাদেশের এক ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’। এর নামের মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে এক রহস্যময়তার আভাস ‘দেবতা’ আর ‘খুম’ (স্থানীয় শব্দ, যার অর্থ জলাধার)। পথচলা শুরু হয় চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান। তারপর রোয়াংছড়ি। রোয়াইংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী যেতে হবে।

এরপর আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে ট্রেক করে শীলবাঁধা পাড়া (লিয়ারগাঁও) যেতে হবে। নৌকা বা বাঁশের ভেলা প্রবেশ করতে হয় দেবতাখুমের অন্ধকারময়, গা ছমছমে জলপথে। দেবতাখুমে যাওয়ার আগেই পড়বে ছোট্ট এক খুম। যার নাম ‘পং সু আং খুম’। এ খুমে সাতার কেটে বা এর সঙ্গে লাগোয়া গাছের শিকড় ধরে ঝুলে ঝুলে যেতে হয় দেবতাখুমে। স্থানীয় গাইড ছাড়া দেবতাখুমে প্রবেশ করা নিষেধ, তাই একজন অভিজ্ঞ গাইড সঙ্গে রাখা জরুরি।

পথ যত এগোয়, ততই বদলে যেতে থাকে প্রকৃতি। পাহাড় ক্রমশ সুউচ্চ হতে থাকে, গাছের ছায়া যেন আরও গভীর হয়। একসময় রাস্তা ফুরিয়ে যায়, সামনে কেবল জল আর পাথুরে খাদ।দেবতাখুম মানে শুধু একটা জলাধার নয়, বরং এক সুরঙ্গের মতো গিরিখাত, যার দুই পাশের পাহাড়ি দেওয়াল যেন আকাশ ছুঁতে চায়। সেখান দিয়ে যেতে হয় লাইফ জ্যাকেট পরে অথবা বাঁশের ভেলায় ভেসে। নিচে গভীর জল, ওপরে আকাশ ঢেকে রেখেছে পাথরের বিশাল দেওয়াল। কোনো কোনো জায়গায় সূর্যের আলো পর্যন্ত পৌঁছায় না, শুধু প্রতিধ্বনিত হয় পানির টুপটাপ শব্দ আর ঘন সবুজের নিঃশব্দ আর্তনাদ।

জলের রং কখনো সবুজ, কখনো নীলচে কালো; গভীরতার ওপর নির্ভর করে এর রূপ বদলায়। মাঝে মাঝে দেখা যায় গুহার মতো ছায়াঘেরা স্থান। যেখানে মনে হয় যেন কোনো এক প্রাচীন দেবতার নিঃশ্বাস জমে আছে। গিরিখাতের পাথুরে দেয়ালগুলো এতটাই উঁচু যে ওপরে তাকালে আকাশ ক্ষুদ্র মনে হয়, যেন এক সরু চিলতে আলো আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে।

চারপাশ এতটাই নীরব যে নিজের নিঃশ্বাসের শব্দও শুনতে পাওয়া যায়। এখানে কোনো কৃত্রিম শব্দ নেই, নেই শহরের কোলাহল। শুধু পানির ধাক্কা, পাখির ডাক আর মাঝে মাঝে বুনো ঝোপের ফিসফিসানি। কোনো কোনো জায়গায় দেওয়ালের গায়ে শ্যাওলা জমে আছে, ছোট ছোট লতাগুল্ম ঝুলে আছে দেওয়ালের চূড়া থেকে, যেন প্রকৃতি নিজেই এক শিল্পকর্ম এঁকেছে।এখানে প্রকৃতির নিয়মে চলতে হয়। স্রোতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়, বরং নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া, প্রকৃতির ছন্দে চলার নামই হয়তো দেবতাখুমের আসল সৌন্দর্য।

ফিরতি পথ: মন ফিরে এলেও মন পড়ে থাকে সেখানে ফিরতে হয়, কারণ এই পৃথিবীর নিয়মই হলো চলতে থাকা। কিন্তু দেবতাখুমের সেই শীতল জল, পাথুরে দেওয়ালের রহস্যময় রূপ আর নিস্তব্ধতার গভীরতা মনে গেঁথে থাকে। একবার সেখানে গেলে, শহরের ব্যস্ত জীবনে ফিরে এসেও অনুভব করা যায় সেই প্রশান্তি, সেই নিঃসঙ্গ অথচ আপন করা প্রকৃতির আহ্বান।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!