বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ঘুমের ঘাটতি। মানসিক চাপ, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ও অনিয়মিত রুটিনের কারণে কোটি মানুষ দীর্ঘমেয়াদি ঘুম সংকটে ভুগছে। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ও স্ট্যাটিস্টার তথ্যমতে, কোন দেশের মানুষ কত ঘণ্টা ঘুমায় এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঘুম জরুরি-তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে।
গবেষণা বলছে, গড়ে সবচেয়ে কম ঘুমায় জাপানের মানুষ-প্রতিদিন মাত্র ৫ ঘণ্টা ৫২ মিনিট। এর পরেই দক্ষিণ কোরিয়া (৬ ঘণ্টা ২ মিনিট), কুয়েত (৬ ঘণ্টা ১৫ মিনিট), তাইওয়ান (৬ ঘণ্টা ২১ মিনিট), ইন্দোনেশিয়া (৬ ঘণ্টা ২৫ মিনিট) ও সিঙ্গাপুর (৬ ঘণ্টা ৩৪ মিনিট)।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের গড় ঘুম ৬ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট, ইসরায়েল ৬ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট, মেক্সিকো ৬ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট, চিলি ৬ ঘণ্টা ৩৯ মিনিট, ব্রাজিল ৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট, চীন ৬ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট, রাশিয়া ৬ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট, ইতালি ৬ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট ও স্পেন ৬ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট।
অন্যদিকে, বেশি ঘুমের ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে নিউজিল্যান্ড, যেখানে গড় ঘুমের সময় ৭ ঘণ্টা ২৭ মিনিট। এরপর নেদারল্যান্ডস (৭ ঘণ্টা ২৪ মিনিট), যুক্তরাজ্য (৭ ঘণ্টা ২২ মিনিট) ও অস্ট্রেলিয়া (৭ ঘণ্টা ২০ মিনিট) ভালো ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ ও নীতি অনুসরণ করছে। এসব দেশে নমনীয় কর্মঘণ্টা, স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনযাত্রায় ভারসাম্য নাগরিকদের নিয়মিত ঘুম নিশ্চিত করছে।
বাংলাদেশেও ঘুমের সংকট কম নয়। শহুরে জীবনের দ্রুতগতি, কাজের চাপ ও ডিজিটাল ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার দেশের মানুষের ঘুমের মান ও সময়কে প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে ঢাকার মতো বড় শহরে মানুষের গড় ঘুমের সময় সাধারণত ৫.৫ ঘন্টা থেকে ৬ ঘণ্টার কাছাকাছি, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের তুলনায় কম।
ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন ও আমেরিকান একাডেমি অব স্লিপ মেডিসিনের সুপারিশ অনুযায়ী, নবজাতকের জন্য দৈনিক ১৪–১৭ ঘণ্টা, শিশুদের জন্য ৯–১৫ ঘণ্টা, কিশোরদের জন্য ৮–১০ ঘণ্টা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৭–৯ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত সময় ৭–৮ ঘণ্টা। বয়স, শারীরিক অবস্থা ও জীবনযাপনের ধরনভেদে এই সময় কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।
ঘুমের এই ঘাটতি মানসিক চাপ বাড়াতে পারে এবং দৈনন্দিন কার্যক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই বিশ্বের অনেক স্বাস্থ্যভিত্তিক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘুমের গুরুত্ব নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পরামর্শ দিতে গুরুত্ব দিচ্ছে।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন (২০১৫), আমেরিকান একাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন (২০১৬), ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ, স্ট্যাটিস্টা।