বর্তমানে ফেসবুক শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী অনলাইন মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম, যা ব্যবসা, ব্র্যান্ডিং এবং সংবাদ প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কিন্তু অনেকেই না জেনে কিংবা অবহেলায় ফেসবুক পেজ পরিচালনার সময় এমন কিছু ভুল করে থাকেন, যা পেজের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে, পেজের রিচ কমে যায়, ফলোয়ার হারিয়ে যায় এবং ব্যবসায়িক সুযোগ নষ্ট হয়। নিচে ফেসবুক পেজ পরিচালনার সময় সাধারণত যে ভুলগুলো করা হয় এবং সেগুলো কীভাবে এড়িয়ে চলা যায়, তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
নিজের প্রোফাইলে পেজের কনটেন্ট শেয়ার করা
অনেকেই নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে বারবার পেজের পোস্ট শেয়ার করেন। এতে পেজের অর্গানিক রিচ কমে যেতে পারে। কারণ, ফেসবুক অ্যালগরিদম বারবার একই কনটেন্ট প্রোফাইলে শেয়ার করা পছন্দ করে না। এর পরিবর্তে, আপনার পেজের পোস্টগুলো উপযুক্ত গ্রুপে বা অন্যান্য রিলেভেন্ট পেজে শেয়ার করুন। তবে সেটিও যেন স্প্যামিংয়ের পর্যায়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কপিরাইট করা কনটেন্ট ব্যবহার করা
অন্যের ছবি, ভিডিও বা লেখা অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা কপিরাইট লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। এতে শুধু আপনার পেজের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয় না, বরং আইনি জটিলতায়ও পড়তে পারেন। তাই, নিজের তৈরি কনটেন্ট ব্যবহার করুন বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত কনটেন্ট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
স্প্যামিং করা
একই পোস্ট বারবার করা, অপ্রাসঙ্গিক কনটেন্ট দিয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলা বা এক পোস্ট একাধিক গ্রুপে একসাথে শেয়ার করা স্প্যামিং হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে আপনার পেজের প্রতি ব্যবহারকারীদের বিরক্তি বাড়ে এবং আপনার পোস্টের রিচও কমে যায়।
ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য দেওয়া
পেজের নাম, বিবরণ, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি ভুল দিলে ব্যবহারকারীর মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়। অনেকেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন এবং আপনার পেজ ফলো করা বা আপনার সেবা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। তাই পেজ খুলতে গেলে শুরুতেই সঠিক তথ্য দিন এবং প্রয়োজনে নিয়মিত হালনাগাদ করুন।
ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা
অনুমতি ছাড়া ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি বা মেসেজ প্রকাশ করা উচিত নয়। এতে আইনি সমস্যা হতে পারে এবং পেজের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা করা পেজ পরিচালকের নৈতিক দায়িত্ব।
অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচার করা
পেজে নিরবিচারে শুধু বিজ্ঞাপন দিলেই যে সেল বা রিচ বাড়বে, তা নয়। বরং এতে ফলোয়াররা বিরক্ত হয়ে পড়ে। তাই পণ্য বা সেবার প্রচারের পাশাপাশি শিক্ষামূলক, বিনোদনমূলক ও তথ্যবহুল কনটেন্টও দিন। এতে ব্যবহারকারীদের সাথে সম্পর্ক ভালো হয়।
অন্যের পেজ হ্যাক করার চেষ্টা করা
এটি শুধু নৈতিকভাবে ভুল নয়, বরং সম্পূর্ণ বেআইনি। অন্যের পেজ হ্যাক করার চেষ্টা করলে ফেসবুক আপনাকে আইডি ব্লক করে দিতে পারে, এমনকি আইনি ব্যবস্থা নিতেও পারে। তাই এসব অবৈধ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকুন।
খারাপ ভাষা বা আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা
আপত্তিকর বা আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করলে আপনার পেজের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। অনেক সময় ফেসবুক পেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তাই সবসময় ভদ্র এবং পেশাদার ভাষায় পোস্ট করুন এবং কমেন্টে শালীনতা বজায় রাখুন।
অনিয়মিত পোস্ট করা
পেজে নিয়মিত কনটেন্ট না দিলে ফলোয়ারদের আগ্রহ হারিয়ে যায়। ফলে রিচ কমে যায় এবং পেজ নিষ্ক্রিয় মনে হয়। তাই সপ্তাহে অন্তত ৩-৫টি মানসম্মত পোস্ট করার চেষ্টা করুন।
অন্যের পেজ বা কনটেন্ট কপি করা
অন্যের পেজের ডিজাইন, লোগো বা কনটেন্ট হুবহু কপি করলে সেটি ব্যবহারকারীদের চোখে পড়ে এবং আপনার পেজের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। সৃজনশীলতা দেখিয়ে নিজস্ব স্টাইল তৈরি করুন।
ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড না মানা
ফেসবুকের নির্ধারিত নীতিমালা লঙ্ঘন করলে আপনার পেজের রিচ কমে যেতে পারে, এমনকি পেজ স্থায়ীভাবে ডিলিটও হতে পারে। তাই সবসময় ফেসবুকের গাইডলাইন পড়ুন এবং তা অনুসরণ করুন।
কমেন্ট ও ইনবক্স উপেক্ষা করা
ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন বা মন্তব্যের উত্তর না দিলে তারা বিরক্ত হয় এবং আপনার পেজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই নিয়মিত কমেন্ট মনিটর করুন এবং ইনবক্সের উত্তর দিন।
নিম্নমানের কনটেন্ট প্রকাশ করা
ছবি বা ভিডিও অস্পষ্ট, তথ্য অসম্পূর্ণ বা ভুল হলে পেজের পেশাদারিত্ব কমে যায়। ভালো মানের ছবি, আকর্ষণীয় ভিডিও এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়ে পোস্ট করুন।
ভুল সময়ে পোস্ট করা
আপনার ফলোয়ারদের অ্যাক্টিভ সময়ে পোস্ট না করলে রিচ কমে যায়। ফেসবুক ইনসাইটস ব্যবহার করে বুঝুন কোন সময়ে আপনার ফলোয়াররা বেশি সক্রিয় থাকে এবং সে সময়ে পোস্ট করুন।
কেবল বুস্ট বা বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করা
শুধু পেইড বুস্ট দিয়ে গ্রোথ ধরে রাখা যায় না। অর্গানিক কনটেন্টের মান বাড়ান, ভিজ্যুয়াল আকর্ষণীয় করুন এবং কনটেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করুন।
একটি সফল ফেসবুক পেজ পরিচালনার জন্য ধৈর্য, পরিকল্পনা এবং সঠিক কৌশল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরোক্ত ভুলগুলো এড়িয়ে চললে আপনার পেজের অর্গানিক রিচ বাড়বে, ব্যবহারকারীদের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হবে এবং পেজের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করা সহজ হবে। মনে রাখবেন, ফেসবুক একটি গণমাধ্যম এর ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা এবং পেশাদারিত্বই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
আপনার মতামত লিখুন :