ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

আপনার ফেসবুক কি নিরাপদ, জেনে নিন

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম
ফেসবুকে লগিং করতে ব্যস্ত সবাই । ছবি- সংগৃহীত

বর্তমান যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ফেসবুক। বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষ এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। তবে ফেসবুক নিরাপদ কিনা, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থেকেই যায়।

ফেসবুক কতটা নিরাপদ তা নির্ভর করে আপনি কীভাবে এটি ব্যবহার করছেন তার ওপর। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে ফেসবুক ব্যবহার অনেকটাই নিরাপদ করা সম্ভব। আজকের প্রতিবেদনে জানানো হলো, কীভাবে আপনি ফেসবুক নিরাপদভাবে ব্যবহার করতে পারেন এবং কী কী বিষয় খেয়াল রাখবেন।

ফেসবুক নিরাপত্তার ঝুঁকি

হ্যাকিং ও ফিশিং আক্রমণ

বর্তমানে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হ্যাকাররা বিভিন্ন ভাবে আপনার অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। এছাড়া, ফিশিং লিঙ্কের মাধ্যমে প্রতারকরা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করে।

ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার

অনেক ব্যবহারকারী তাদের ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন ফোন নম্বর, ঠিকানা, জন্মতারিখ ইত্যাদি প্রকাশ করেন। এসব তথ্য অপরিচিত বা প্রতারকের হাতে পড়লে তারা তা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারে।

পরিচয় চুরি (Identity Theft)

আপনার নাম, ছবি বা ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে অন্য কেউ ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করতে পারে। এতে আপনার সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ম্যালওয়্যার ও ভাইরাস আক্রমণ

সন্দেহজনক লিঙ্ক বা ফাইল ডাউনলোডের মাধ্যমে আপনার ডিভাইসে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে পারে। এতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

স্প্যাম ও প্রতারণা

ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে স্প্যাম মেসেজ বা প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন আসে, যা ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে। অনেকেই আর্থিক ক্ষতির শিকার হন।

ফেসবুক নিরাপদভাবে ব্যবহারের সহজ উপায়

শক্তিশালী ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন

আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের জন্য অবশ্যই একটি শক্তিশালী এবং অনন্য পাসওয়ার্ড নির্বাচন করুন। পাসওয়ার্ডে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করুন। কখনোই সহজে অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। যেমনঃ আপনার নাম, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি।

টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু করুন

টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন হলো নিরাপত্তার জন্য একটি অতিরিক্ত স্তর। এটি চালু করলে আপনি শুধু পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে পারবেন না, বরং আপনার মোবাইলে পাঠানো একটি কোডও লাগবে। এতে আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।

সন্দেহজনক লিঙ্ক বা ফাইল থেকে দূরে থাকুন

অপরিচিত বা সন্দেহজনক লিঙ্কে কখনোই ক্লিক করবেন না। অনেক সময় প্রতারকরা ফিশিং লিঙ্ক পাঠিয়ে থাকে, যেখানে ক্লিক করলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য বা অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারে।

অপরিচিত ব্যক্তিকে বন্ধু তালিকায় যোগ করা থেকে বিরত থাকুন

সব সময় পরিচিত এবং বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিদেরই বন্ধু তালিকায় যুক্ত করুন। অপরিচিত বা সন্দেহজনক ব্যক্তিদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট গ্রহণ করবেন না।

প্রাইভেসি সেটিংস আপডেট করুন

আপনার ফেসবুক প্রোফাইলের গোপনীয়তা সেটিংস এমনভাবে রাখুন, যাতে আপনার পোস্ট, ছবি বা ব্যক্তিগত তথ্য শুধু আপনার বন্ধুরাই দেখতে পায়।

অ্যাপ পারমিশন যাচাই করুন

ফেসবুকের সাথে যুক্ত থার্ড পার্টি অ্যাপ বা গেমের মাধ্যমে অনেক সময় তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। আপনি কোন কোন অ্যাপকে অনুমতি দিয়েছেন, তা নিয়মিত চেক করুন এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের পারমিশন বাতিল করুন।

পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার এড়িয়ে চলুন

পাবলিক ওয়াই-ফাই অনেক সময় নিরাপদ নয়। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ফেসবুকে লগইন করলে আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

নিয়মিত লগ আউট করুন

বিশেষ করে অন্যের ডিভাইস বা পাবলিক কম্পিউটারে ফেসবুক ব্যবহার করলে অবশ্যই লগ আউট করে নিন।

সন্দেহজনক কার্যকলাপ মনিটর করুন

আপনার অ্যাকাউন্টে যদি অস্বাভাবিক লগইন বা কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন, তাহলে দ্রুত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন এবং নিরাপত্তা সেটিংস পরীক্ষা করুন।

রিপোর্ট ও ব্লক অপশন ব্যবহার করুন

আপনি যদি কোনো ব্যবহারকারীকে সন্দেহজনক মনে করেন বা কেউ আপনাকে হয়রানি করে, তাহলে রিপোর্ট করুন এবং প্রয়োজনে ব্লক করুন।

হ্যাক হলে করণীয়

  • পাসওয়ার্ড দ্রুত পরিবর্তন করুন।
  • টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন।
  • ফেসবুক হেল্প সেন্টারের মাধ্যমে রিকভারি অপশন ব্যবহার করুন।
  • সন্দেহজনক অ্যাপ বা ডিভাইস লগআউট করুন।
  • ফেসবুকের সাপোর্ট টিমের সাথে যোগাযোগ করুন।

ফেসবুক নিরাপত্তা নিয়ে কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ

  • আপনার ইমেইল এবং মোবাইল নম্বরও সুরক্ষিত রাখুন।
  • ফেসবুকের নতুন আপডেট সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
  • সন্দেহজনক বিজ্ঞাপন বা লিঙ্কের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
  • কোনো অপরিচিত ফেসবুক গ্রুপ বা পেজে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।
  • শিশু বা কিশোরদের জন্য ফেসবুক ব্যবহারে অভিভাবকের তদারকি জরুরি।

ফেসবুক একটি শক্তিশালী সামাজিক মাধ্যম হলেও এর কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যা সচেতনতা ও সঠিক ব্যবহার দ্বারা সহজেই এড়ানো সম্ভব। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করা, সন্দেহজনক লিঙ্ক এড়ানো এবং প্রাইভেসি সেটিংস ঠিকভাবে ব্যবহার করলে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অনেকটাই নিরাপদ থাকবে। মনে রাখবেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আংশিকভাবে আপনারও। তাই আজই আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা যাচাই করুন এবং ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদভাবে ব্যবহার করুন।