ভিডিও কনটেন্ট আজকের ডিজিটাল যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সোশ্যাল মিডিয়া ক্রিয়েটর এবং সাধারণ ব্যবহারকারীরাও ভিডিওর মাধ্যমে তাদের বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছেন। তবে ভিডিও তৈরি করা বহু সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল কাজ। গুগল এই সমস্যার সমাধান করতে এবার তাদের ভিডিও তৈরির এআই অ্যাপ ‘ভিডস’ (Vids) সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে।
ভিডস অ্যাপ সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ
আগে ভিডস অ্যাপটি শুধুমাত্র গুগল ওয়ার্কস্পেস ব্যবহারকারী বা নির্দিষ্ট এআই প্ল্যান ব্যবহারকারীর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। তবে সম্প্রতি গুগল এই অ্যাপটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীরাও সহজে এবং দ্রুত ভিডিও তৈরি করতে পারবে।
এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারী কয়েকটি লেখা বা ছবি ব্যবহার করে অত্যাধুনিক ভিডিও তৈরি করতে পারবেন। টেমপ্লেট, স্টক মিডিয়া, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং অন্যান্য এআই সুবিধা ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি প্রক্রিয়া এখন অনেক সহজ এবং সময়সাশ্রয়ী হয়েছে।
ভিডস অ্যাপে যেসব ফিচার রয়েছে
এআই-নির্ভর ভিডিও তৈরি: ব্যবহারকারীরা শুধু বিষয়বস্তু লিখে দিলে অ্যাপটি সম্ভাব্য দৃশ্য, স্টক ছবি এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যুক্ত করে ভিডিও তৈরি করে দেয়।
স্টোরিবোর্ড তৈরি: গুগল ওয়ার্কস্পেসের মাধ্যমে এআই-নির্ভর স্টোরিবোর্ড তৈরি করা যায়। এটি ভিডিও তৈরি প্রক্রিয়াকে আরও সুগম এবং পরিকল্পিত করে।
টেমপ্লেট এবং স্টক মিডিয়া ব্যবহার: ভিডস অ্যাপ বিভিন্ন প্রি-ডিজাইন টেমপ্লেট এবং স্টক ছবি সরবরাহ করে, যা ব্যবহারকারীর ভিডিও দ্রুত সম্পন্ন করতে সাহায্য করে।
সংক্ষিপ্ত ভিডিও নির্মাণ: উন্মুক্ত সংস্করণে ব্যবহারকারীরা আট সেকেন্ড পর্যন্ত ভিডিও তৈরি করতে পারবেন। এই ভিডিওগুলো প্রেজেন্টেশন, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট বা শিক্ষামূলক কনটেন্টে ব্যবহার করা যায়।
ভবিষ্যতের সুবিধা: যদিও সব ফিচার উন্মুক্ত সংস্করণে নেই, তবে ভবিষ্যতে এআই তৈরি অ্যাভাটার ফিচার ব্যবহার করে বার্তা উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। এই অ্যাভাটার ব্যবহারকারীদের হয়ে ভিডিওতে বক্তব্য রাখতে পারবে।
ভিডস অ্যাপের সুবিধা
গুগল এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভিডিও তৈরি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে চাইছে। বিশেষ করে পণ্য প্রদর্শনী, যেমন: কোম্পানি বা ব্র্যান্ড সহজে পণ্য প্রদর্শনী ভিডিও তৈরি করতে পারবে।
প্রশিক্ষণমূলক ভিডিও: শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং টিউটোরিয়াল ভিডিও তৈরি করা সহজ হবে।
সহায়ক কনটেন্ট: ব্লগার, ইউটিউবার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ক্রিয়েটররা দ্রুত সহায়ক কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন।
গুগলের পণ্য বিভাগের পরিচালক বিষ্ণু শিবাজি জানিয়েছেন, বাস্তবে ১০ মিনিটের একটি ভিডিও তৈরি করতে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মাধ্যমে ছয় মাস পর্যন্ত সময় এবং কয়েক হাজার ডলার খরচ হতে পারে। স্ক্রিপ্ট লেখা, রেকর্ডিং, সংশোধন ও সম্পাদনা মিলিয়ে এটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ভিডস অ্যাপ ব্যবহার করে, প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রক্রিয়া অনেক দ্রুত এবং কম খরচে সম্পন্ন করতে পারবে।
ভিডস অ্যাপ যারা ব্যবহার করবে
শিক্ষক: শিক্ষকেরা অল্প সময়ে পাঠের বিষয়বস্তু ভিডিওতে রূপান্তর করতে পারবেন। এটি ক্লাসরুমে বা অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা সম্ভব।
ব্র্যান্ড বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান: নতুন পণ্য লঞ্চের জন্য বিজ্ঞাপন ভিডিও তৈরি করা সহজ হবে। প্রি-ডিজাইন টেমপ্লেট ব্যবহার করে পেশাদার মানের ভিডিও মাত্র কয়েক মিনিটে তৈরি করা সম্ভব।
সোশ্যাল মিডিয়া ক্রিয়েটর: ইউটিউবার বা ইনস্টাগ্রাম/টিকটক ক্রিয়েটররা নতুন ভিডিও কনটেন্ট দ্রুত তৈরি করতে পারবেন। স্টক মিডিয়া, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং এআই-নির্ভর ভিডিও প্রোডাকশন ব্যবহার করে তারা নতুন ভিডিও প্রকাশ করতে পারবেন।
গুগলের এআই প্রযুক্তি এবং ভিডস
ভিডস অ্যাপের মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করছে গুগলের এআই প্রযুক্তি। এটি ব্যবহারকারীর দেওয়া লেখা বা ছবি বিশ্লেষণ করে ভিডিওর জন্য সম্ভাব্য দৃশ্য নির্বাচন করে। এ ছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং ভিজ্যুয়াল এফেক্টও যোগ করে।
এই প্রক্রিয়ায় স্ক্রিপ্ট থেকে সম্পূর্ণ ভিডিও তৈরি করা সম্ভব, যা সাধারণ ভিডিও প্রোডাকশন পদ্ধতির তুলনায় অনেক দ্রুত। গুগলের এআই ভিডিও প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে ‘ক্লিক করে তৈরি করুন’ ধরনের সরল ইন্টারফেস প্রদান করছে।
সীমাবদ্ধতা
এআই তৈরি অ্যাভাটার: উন্মুক্ত সংস্করণে অ্যাভাটার ফিচার নেই। ভবিষ্যতে এটি ব্যবহার করে ভিডিওতে নিজস্ব বার্তা উপস্থাপন করা যাবে।
ভিডিও দৈর্ঘ্য: উন্মুক্ত সংস্করণে সর্বাধিক ৮ সেকেন্ড ভিডিও তৈরি করা যায়। বড় বা দীর্ঘ ভিডিও তৈরির জন্য প্রিমিয়াম বা ওয়ার্কস্পেস প্ল্যান প্রয়োজন।
কিছু অ্যাডভান্সড ফিচার: প্রি-সেট ফিল্টার, কাস্টম ভিজ্যুয়াল এফেক্ট এবং ১০ মিনিটের দীর্ঘ ভিডিও তৈরি করার ক্ষমতা সীমিত।
তবুও ছোট ভিডিও, প্রেজেন্টেশন বা সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর।
ব্যবহারকারীর প্রতিক্রিয়া
প্রাথমিক ব্যবহারকারীরা জানিয়েছে, ভিডস অ্যাপ সহজ, দ্রুত এবং কার্যকরী। কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রি-ডিজাইন টেমপ্লেট ও স্টক মিডিয়া ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করা যায়।
ফ্রিল্যান্সার: আমি আমার ছোট ব্যবসার প্রোডাক্ট ভিডিও তৈরি করতে পারছি মাত্র কয়েক মিনিটে। এটি আমার জন্য বড় সাহায্য।
শিক্ষক: ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের জন্য টিউটোরিয়াল ভিডিও তৈরি করা অনেক সহজ হয়েছে।
ক্রিয়েটর: ভিডস ব্যবহার করে আমি সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য নতুন ভিডিও দ্রুত তৈরি করতে পারছি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
- দীর্ঘ ভিডিও তৈরির ক্ষমতা বৃদ্ধি
- এআই তৈরি অ্যাভাটার ফিচার চালু
- কাস্টম টেমপ্লেট এবং স্টক মিডিয়া সম্প্রসারণ
- উন্নত এআই ভিডিও এডিটিং টুলস অন্তর্ভুক্ত করা
এই উন্নয়নগুলোর ফলে ভিডস অ্যাপ আরও পেশাদার এবং বহুমুখী ভিডিও তৈরির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিণত হবে।
ভিডিও তৈরির প্রক্রিয়া কখনো সহজ ছিল না। বিশেষ করে প্রফেশনাল মানের ভিডিও তৈরি করতে সময় এবং খরচের বড় বাধা ছিল। গুগল ভিডস অ্যাপ সেই বাধা অনেকটাই দূর করেছে।
এখন সাধারণ ব্যবহারকারী, শিক্ষার্থী, ব্র্যান্ড এবং সোশ্যাল মিডিয়া ক্রিয়েটররা সহজেই এবং দ্রুত ভিডিও তৈরি করতে পারছে। এই অ্যাপটির মাধ্যমে ভিডিও কনটেন্ট তৈরির প্রক্রিয়া দ্রুত, সহজ এবং কম খরচে করা সম্ভব।
সূত্র: দ্য ভার্জ
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন