আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম দাবি করেছেন, ৫ আগস্ট গণভবনে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে তার ছোট বোন শেখ রেহানা পা ধরেছিলেন।
রোববার (২৫ মে) ট্রাইব্যুনালে বিচারকদের সামনে একটি লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি এ তথ্য প্রকাশ করেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা ৪ আগস্ট সকাল থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য।’
চিফ প্রসিকিউটরের ভাষ্য অনুযায়ী, আন্দোলন চলাকালে ৩ আগস্ট সারা দেশে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। রাতেই কয়েকজন উপদেষ্টা তাকে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরামর্শ দেন, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।
‘৪ আগস্ট সকাল থেকে ঢাকায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে থাকে। গণভবন অভিমুখে মিছিল রওনা হলে নিরাপত্তা বাহিনী হুঁশিয়ার করে দেয়, সময় স্বল্পতার কারণে দ্রুত পদত্যাগ ছাড়া আর বিকল্প নেই।’
তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনা যখন পদত্যাগে রাজি হচ্ছিলেন না, তখন কর্মকর্তারা শেখ রেহানার সঙ্গে আলোচনা করে তাকে বিষয়টি বোঝানোর দায়িত্ব দেন। শেখ রেহানা পরে তার বড় বোন শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে অনুরোধ করেন এবং তার পা ধরে রাখেন। একপর্যায়ে বিদেশে অবস্থানরত সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও এক কর্মকর্তা ফোনে কথা বলেন। জয় নিজেও তার মাকে ফোনে পদত্যাগে রাজি করান।
পরিস্থিতির অবনতির খবর পেয়ে রেকর্ডকৃত ভাষণ প্রচারের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। পরে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা তেজগাঁও বিমানবন্দরে যান এবং সেখান থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে দেশ ছাড়েন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে জানায়, শেখ হাসিনা ভারতের গাজিয়াবাদে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৩৬ মিনিটে পৌঁছান। সেখান থেকে তার লন্ডন গমনের সম্ভাবনার কথাও উঠে আসে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনকে ‘রাতের ভোট’ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনকে ‘ডামি ভোট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বিরোধী দলগুলো।
চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে শিক্ষার্থী ও জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে মাত্র সাত মাসের মাথায় শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হয়।
আপনার মতামত লিখুন :