জুলাই গণঅভ্যুত্থান, গুম ও বন্দি রাখা সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি চলতি বছরের ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি মামলায় ৫ পৃষ্ঠার জবানবন্দি প্রদান করেন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘ব্যারিস্টার আরমান টিএফআই সেলে বন্দি আছেন—বিষয়টি আমি জানতাম। তবে তাকে আমার সময় তুলে আনা হয়নি, অনেক আগেই তাকে আনা হয়।’
তিনি জানান, র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের সময় তার পূর্বসূরি বেনজির আহমেদ তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। এরপর ডিরেক্টর (ইন্টেলিজেন্স) এবং এডিশনাল ডিজি (অপারেশন) পদে থাকা সরোয়ার বিন কাশেমও তাকে আরমানের আটকের বিষয়ে জানান।
চৌধুরী মামুন বলেন, ‘তাকে গুম করে রাখা ও বন্দি রাখার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল। পরে বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকির সঙ্গে আলোচনা করি। তিনি বলেন, ‘ঠিক আছে, রাখেন। পরে জানাব।’ এরপর আর কিছু জানাননি।’
তিনি আরও জানান, দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় তিনি পরবর্তী র্যাব ডিজি খুরশিদ হোসেনকে এ বিষয়ে অবহিত করেন।
সাবেক আইজিপি বলেন, ‘টিএফআই সেলে বন্দিদের আটক ও নির্যাতনের বিষয়গুলো র্যাবের ডিরেক্টর (ইন্টেলিজেন্স) দেখভাল করতেন। আমি এসব বিষয়ে সবসময় অবহিত থাকতাম না।’
তিনি জানান, র্যাবে দায়িত্ব পালনকালে সারওয়ার বিন কাশেম, খায়রুল ইসলাম ও মশিউর রহমান এই পদে ছিলেন। এ ছাড়া গুম ও নির্যাতনে কুখ্যাতি পাওয়া আলেপ উদ্দিনকে র্যাবের গোয়েন্দা শাখায় আনা হয় এডিশনাল ডিজি (অপারেশন)-এর প্রস্তাবে।
আলেপকে র্যাবের অনেকে পছন্দ করতেন কারণ তিনি গুম ও নির্যাতনে দক্ষ ছিলেন উল্লেখ করে তিনি স্বীকার করেন, ‘র্যাবে দায়িত্বে থাকাকালীন আমি কিছু কিছু অপেশাদার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতাম, তবে কোনো তদন্ত করিনি বা ব্যবস্থা নিইনি। এসব সিদ্ধান্ত মূলত গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আসত এবং তারা সরাসরি বাস্তবায়ন করত।’
চৌধুরী মামুন বলেন, ‘র্যাব পুলিশের অধীনে থাকলেও প্রায়শই চেইন অব কমান্ড মানা হতো না। অনেক সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই সরাসরি নির্দেশনা আসত, বিশেষত সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকির মাধ্যমে।’
তিনি জানান, এসব কারণেই অনেক বিষয় জানলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেননি।