আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-অপহরণ, নির্যাতন, খুন ও জুলাইয়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলায় কারাগারে পাঠানো ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ঢাকা সেনানিবাসে স্থাপিত সাবজেলে রাখা হবে। আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সেনা কর্মকর্তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর তিনি এ কথা বলেন।
ব্যারিস্টার সারোয়ার বলেন, ‘গত ৮ অক্টোবর তিনটি মামলায় ট্রাইব্যুনালে তিনটি আদেশ জারি হয়। এতে সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর সেনা কর্তৃপক্ষ তাদের সেনা সদর হেফাজতে নেয়। আজ তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।’
তিনি জানান, আদালত তাদের ওকালতনামা স্বাক্ষরের অনুমতি দিয়েছেন এবং তিনটি আবেদন দাখিল করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি জামিন আবেদন, একটি প্রিভিলেজ কমিউনিকেশন এবং একটি সাবজেলে রাখার অনুরোধ।
সাবজেল প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সারোয়ার বলেন, ‘জেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। যারা পলাতক রয়েছেন, তাদের বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্ধারিত তারিখ রয়েছে। শুনানির পরবর্তী তারিখ ২০ নভেম্বর। আপাতত সেনানিবাসে ঘোষিত সাবজেলে তাদের রাখা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টেকনিক্যালভাবে এটি গ্রেপ্তার নয়, বরং স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ। তারা সকালে আদালতে হাজির হয়েছেন; পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। প্রশাসনিক নিরাপত্তার জন্য একসঙ্গে গাড়িতে আনা হয়েছিল। এটি ছিল সম্পূর্ণ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অংশ।’
এদিন সকাল ৮টার পর তিন মামলার শুনানি হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শুনানি পরিচালনা করেন। পরে আদালতে হাজির হওয়া ১৫ জন কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার, সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
কারাগারে পাঠানো কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে. এম. আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে)।
এ ছাড়া র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেদোয়ানুল ইসলাম এবং বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত-বিন-আলমও কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অতিরিক্তভাবে ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিন পরিচালক, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরোয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকীকেও জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন