ঢাকা সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

হাসিনার রায় ঘিরে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় কড়া নিরাপত্তা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৯:১২ এএম
ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ছবি- সংগৃহীত

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায় ঘোষণা করা হবে আজ।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ রায় ঘোষণায় বসবেন। এ রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

নিরাপত্তার চাদরে ট্রাইব্যুনাল: 

রায় ঘোষণার আগের রাত থেকেই ট্রাইব্যুনালের চারপাশে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের অতিরিক্ত মোতায়েন করা হয়। সোমবার ভোর থেকে এলাকাটির সব প্রবেশপথে কঠোর তল্লাশি চলছে। পথচারী, যানবাহন থেকে শুরু করে ব্যাগ-প্যাক—সবই পরীক্ষা করা হচ্ছে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে।

পুলিশ জানিয়েছে, রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনো অস্থিতিশীলতা বা নাশকতার চেষ্টা প্রতিহত করার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মামলার অগ্রগতি

গত ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করে ট্রাইব্যুনাল। মামলার অপর দুই আসামি—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুন। তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করেছে প্রসিকিউশন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক থাকায় রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন তাদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। আইজিপি মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

এই মামলায় মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য দেন। জুলাই আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম ও দৈনিক আমার দেশ–এর সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন। গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পরিবারসহ অনেকে সরাসরি আদালতে বয়ান তুলে ধরেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয় এবং প্রথম মামলা হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছরের ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও বিচার শুরু হয়। পরে মার্চে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক আইজিপিকে আসামি করলে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

অভিযোগের সারসংক্ষেপ:

প্রসিকিউশন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়—

প্রথম অভিযোগ: ১৪ জুলাই গণভবনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্যের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র দলীয় ক্যাডারদের সমন্বিত হামলায় দেড় হাজার মানুষ নিহত ও প্রায় ২৫ হাজার আহত হন।

দ্বিতীয় অভিযোগ: আন্দোলনকারীদের দমন করতে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তা বাস্তবায়ন করেন বলে অভিযোগ।

তৃতীয় অভিযোগ: রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা।

চতুর্থ অভিযোগ: রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা।

পঞ্চম অভিযোগ: আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা।

এই সব অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধেই ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’–র অধীনে বিচার করা হচ্ছে।

রায় দেখবে সারা বিশ্ব

বাংলাদেশ টেলিভিশন, রয়টার্স এবং ট্রাইব্যুনালের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ সরাসরি রায় সম্প্রচার করবে। ঢাকার কয়েকটি স্থানে বড় পর্দায় লাইভ দেখার ব্যবস্থাও করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

শাটডাউন ও পরিবহন পরিস্থিতি

রায় ঘোষণার দিনে দেশব্যাপী শাটডাউনের ডাক দিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। তবে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে গণপরিবহন চালু থাকবে।