অবশেষে সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার ‘সুরের ধারা’ বিদ্যালয়ের ছাড়পত্র বাতিল করল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে ২০২৩ সালে রায়ের বাজারের বেড়িবাঁধ এলাকায় ১৯০ শতাংশ জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত নিয়ে রাতারাতি সেখানে গড়ে তোলা হয় এই সুরের ধারা।
মূলত রামচন্দ্রপুর মৌজায় অবস্থিত একটি খালের ওপর ছিল জমিটির অবস্থান। ওই জমির ওপর দৃষ্টি পড়ে বন্যার। তিনি শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাকে দিয়ে জমিটি নাল, অর্থাৎ ভিটি জমি দেখিয়ে ৯৯ বছরের জন্য বরাদ্দ নেন। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বাধ্য হয়ে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে আবেদিত জমিটি ‘নাল’ জমি হিসেবে বরাদ্দ দেয়। এটি জেলা প্রশাসকের অধীন ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত।
দীর্ঘদিন ধরে জমিটি ব্যবহৃত হতো ট্রাক স্ট্যান্ড হিসাবে। সেই অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড সরিয়ে রাতারাতি সেখানে একটি আধা পাকা ইমারত নির্মাণ করে গড়ে তোলা হয় সুরের ধারা সংগীত বিদ্যালয়। পরিবেশবাদীদের প্রবল আপত্তির মুখেও বিদ্যালয়টি একটি ১০ তলা ভবনে রূপান্তরের ইচ্ছে প্রকাশ করে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা রাজাধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজাউক) কাছে আবেদন করলে রাজাউক ছাড়পত্র প্রদান করে।
কিন্তু পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলে তড়িঘড়ি করে ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর আধা পাকা ইমারতের ওপর স্থাপিত সুরের ধারার উদ্বোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন প্রায় অর্ধডজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও ডিএনসিসির মেয়র।
খালের জায়গা এক দখলদার সরিয়ে অন্যজন দখল করবেন, এটা কেউ মেনে নিতে পারছিলেন না। এ নিয়ে অনেক সমালোচনাও হয়। কিন্তু এর মধ্যেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে দ্রুত সেখানে একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করে সুরের ধারা কর্তৃপক্ষ। এতে বাদ সাধে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। খালের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য সুরের ধারা কর্তৃপক্ষ যে আবেদন করেছে, সেটি অধিকতর যাচাই-বাছাই করার জন্য তারা রাজউককে চিঠি দেয়। একটি জাতীয় গণমাধ্যমেও ‘খালের জায়গা নাল দেখিয়ে গড়ে উঠেছে সুরের ধারা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরই নড়েচড়ে বসে রাজউক। অবশেষে বহুতল ভবন নির্মাণ ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র বাতিল করেছে রাজউক।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, গত ৫ আগস্ট ২০২৪ সরকার পরিবর্তনের পর সুরের ধারার সীমানা বেষ্টনী ভেঙে সেখানে আবার ট্রাকস্ট্যান্ড স্থাপন করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন সেখানে কয়েক শ ট্রাক রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বন্ধ রয়েছে সুরের ধারা গানের স্কুলের স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম।
সুরের ধারার ছাড়পত্র বাতিলের বিষয়ে রাজউকের নগর পরিকল্পনা শাখা থেকে জানা গেছে, যেহেতু সাততলার ওপরে ভবনটি হওয়ার কথা ছিল। তাই বিধি অনুযায়ী এটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় অনুমোদন পাওয়ার কথা ছিল। বিশেষ প্রকল্পের জন্য রাজউকে একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে ছাড়পত্র অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, খালের প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং মালিকানাসংক্রান্ত জটিলতা উদ্ভব হওয়ায় ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে।
সুরের ধারাকে যে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়, পাঁচ-ছয় বছর আগেও সেখানে কাগজে-কলমে ছিল খাল। সেই জমি ভিটা হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন (ডিসি অফিস)। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারি সম্পত্তি বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী ৯৯ বছরের জন্য বরাদ্দও দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত সেই জায়গায় গড়ে ওঠে গানের স্কুল সুরের ধারা। সেই স্কুলের উদ্বোধনে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সাবেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি, ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান, ব্যবসায়ী শাহিনুজ্জামান প্রমুখ।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের এত হেভিওয়েট মন্ত্রী-এমপিদের উপস্থিতিতে উদ্বোধন হওয়ায় কোনো সংস্থা বা কর্তৃপক্ষই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পায়নি। চুপ ছিল রাজউকও। উল্টো তড়িঘড়ি করে বিশেষ প্রকল্প পাস করার উপায় খোঁজে। কিন্তু সরকারের পতনের পর সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়।
        
                            
                                    
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
                                    
                                    
                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                            
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন