বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৫, ০৯:১১ এএম

দেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৫, ০৯:১১ এএম

দেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা

ছবি: সংগৃহীত

যখন রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্য সহায়তা অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা এসেছে ঠিক তখনই বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আগে জনপ্রতি সাড়ে ১২ ডলার করে বরাদ্দ থাকলেও আগামী মাস থেকে তা কমে দাঁড়াবে ৬ ডলার।

আগামী মাস থেকে রেশনের খরচ অর্ধেকে নেমে আসছে এই খবরে অনেককেই নিজের ভাগের রেশনের সবটুকু কিনতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কথা হয় রোহিঙ্গা তরুণ আজিজুল হকের সাথে। যিনি ক্যাম্প থেকে রেশনের খাবার নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন।

আজিজুল হক বলেন, আগামী মাস থেকে শুনছি রেশন কমিয়ে দিবে। এজন্য ডিম, ডাল, চিনি এগুলো নিয়ে রেখেছি। কী করবো, কমিয়ে দিলে তো আর কুলাবে না, তখন অনেক কষ্ট হবে।

এই রেশন কমানোর খবরে নাখোশ অনেকে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরার কথাও বলেন তিনি।

কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা যখন ভবিষ্যতে খাদ্য সংকটের চিন্তায় পড়েছেন, তখন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সাথে নিয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরে আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস।

এমন পরিস্থিতিতে এই সফর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কতখানি কার্যকরি হবে সেটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

শরণার্থী ও ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এর মাধ্যমে রোহিঙ্গারা কনফিডেন্স ফিরে পাবে। তারা তাদের দেশে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবে। এবং তারা মনে করবে বিশ্ব সম্প্রদায় তাদের পাশে আছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চারদিনের সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।

বাংলাদেশে এটি জাতিসংঘের মহাসচিবের দ্বিতীয় সফর, এর আগে তিনি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। আন্তোনিও গুতেরেসের এবারের সফরের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। শুক্রবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আসার পর বেলা দেড়টায় উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। তারা সেখানে ক্যাম্প-১৮ তে লার্নিং সেন্টারে যাবেন এবং শরণার্থী ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলবেন।

এরপর মহাসচিব রোহিঙ্গা কালচারাল মেমোরি সেন্টার পরিদর্শন ও মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করবেন। সন্ধ্যায় ক্যাম্প-২০ এক্সটেনশন হেলিপ্যাড এলাকায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

শনিবার ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শনে এসে শরণার্থী ও ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এই ইফতারটি এক ধরনের সলিডারিটি প্রোগ্রাম। জাতিসংঘ মহাসচিব প্রত্যেকটি বছর একটি মুসলিম দেশে গিয়ে "সলিডারিটি ইফতার করেন, এবার সৌভাগ্যক্রমে এটি বাংলাদেশে হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সাথে সলিডারিটি প্রকাশ করা। রোহিঙ্গারা একা নয়, যদিও তারা তাদের রাষ্ট্র কর্তৃক ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী কর্তৃক নির্যাতিত। কিন্তু বিশ্ব সম্প্রদায় তাদের পাশে আছে, এই ইফতারের মাধ্যমে এটাই বুঝানো।

"রামাদান সলিডারিটি" ইফতার কর্মসূচি ঘিরে এরই মধ্যে প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও শরণার্থী কমিশনার।

এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তার ঘোষণা এর আগেই দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি বা ডব্লিউএফপি।

জাতিসংঘ মহাসচিব এমন এক সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে আসছেন যখন রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্য সহায়তা বাবদ জনপ্রতি সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ছয় ডলারে নামিয়ে আনা হচ্ছে। ফলে এপ্রিল মাস থেকে রোহিঙ্গারা ৫২% শতাংশ কম খাবার কিনতে পারবে। যার কারণে অনেকেই আগেভাগে বাড়তি কিছু কিনে রাখছেন।

আজিজুল হক জানান, সামনের মাসে তারা যে রেশন পাবে সেটি দিয়ে তাদের সংসার চলবে না। যে কারণে তিনি এ মাসে আগে ভাগে কিছু খাবার কিনে রেখেছেন।
মূলত নিবন্ধিত রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে একটি কার্ড দেওয়া হয় যে কার্ড দিয়ে ক্যাম্পের ভিতর থাকা কিছু নির্দিষ্ট সরবরাহকারীর কাছ থেকে প্রতিমাসে জনপ্রতি সাড়ে ১২ ডলারের সমপরিমাণ বাজার করতে পারে।

বৃহস্পতিবার উখিয়ার চার নম্বর ক্যাম্প থেকে বাজার নিয়ে ফিরছিলেন হামিদা বেগম। তিনি বলেন, এখন যে রেশন দেয় এই রেশনে সংসার চলে না। এরপর যদি কমায় আমাদের তো বাঁচার উপায় থাকবে না।"

অনেকের সাথেই কথা বলে যতটুকু বোঝা গেছে আগামী মাস থেকে খাদ্য সহায়তা কমার ঘোষণায় এ মাস থেকেই অনেকে খাবার সংগ্রহ করে রাখছে যাতে চরম সংকটে পড়তে না হয়।

এমন অবস্থায় উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলায়ও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

শরণার্থী ও ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বিভিন্ন দাতা দেশগুলো বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে। এটি খুব সহজ কাজ নয় ১২ লাখ মানুষকে শুধুমাত্র ত্রাণের ওপর দিয়ে চালিয়ে নেওয়া। তারপরও আমাদের বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্র রয়েছে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত আট বছর ধরে আমাদেরকে সহযোগিতা করে আসছিলো। এখন একটা ফান্ড ফ্রিজিংয়ের অর্ডার এসেছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে। আমরা আশা করি সেটি প্রত্যাহার হবে এবং আশা করি ডাব্লিউএটি আমাদেরকে যে চিঠিটি দিয়েছে, তারা যদি ডোনারদের সাথে ভালো যোগাযোগ করতে পারে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি সেটি প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে সেটি হয়তো সমস্যা হওয়ার কথা না।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর ঘিরে যখন পুরো ক্যাম্প এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের ব্যস্ততা চলছিলো তখন সেখানে রোহিঙ্গাদের এ নিয়ে খুব একটা উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি।
তোড়জোড় যা ছিল তার বেশিরভাগই স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে।

বৃহস্পতিবার ক্যাম্প এলাকায় শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায় দাতা সংস্থাগুলোর অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেয়ার এই সিদ্ধান্তে নাখোশ। এর আগে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের কথা বলা হলেও তখন রোহিঙ্গাদের অনেকেই কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরেই থাকার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ ছিল।
কিন্তু খাদ্য সহায়তা কমিয়ে আনার এই ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মনোভাব অনেকটাই বদলেছে।

তাই জাতিসংঘ মহাসচিব ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরের আগের দিনই তাদের অনেককেই দাবি তোলেন, খাদ্য সহায়তা না বাড়িয়ে যেন তাদের দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।

পঞ্চাশোর্ধ মোহাম্মদ হোসেন নামে এক শরণার্থী বেশ ক্ষোভের সুরেই বলেন, আমরা অসহায় হয়ে এখানে প্রাণ বাঁচাতে এসেছি। আমাদের খাবার দরকার নাই। এটা নিয়ে কিছু ভাবছি না। আমরা বার্মায় (মিয়ানমার) কীভাবে ফেরত যাবো সেটা জানা দরকার।

প্রায় একই রকম ভাষ্য হামিদা বেগমেরও। তিনি বলেন, দাবি দাওয়া কিছু নাই, আমাদের দেশে আমরা ফিরে যেতে পারলেই আমরা খুশি। দেশে সুন্দর ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করলে ভালো লাগবে। আমাদের দ্রুত বার্মা (মিয়ানমার) পাঠাও।

তাহলে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কী কী করা হচ্ছে? কিংবা কবে নাগাদ তাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে শরণার্থী ও ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, প্রত্যাবাসনের বিষয়টি মিয়ানমারের ও বাংলাদেশের বিষয়, বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিষয়। এই বিষয়গুলো দুই দেশকে মিলেই ঠিক করতে হবে।

তথ্যসুত্র: বিবিসি বাংলা

আরবি/এসবি

Link copied!