রংপুরের মিঠাপুকুরে পরীক্ষাকেন্দ্রে নকল সরবরাহের সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিককে ‘হাঁটু ভেঙে পঙ্গু করে দেওয়ার’ হুমকির ঘটনায় আলোচিত অধ্যক্ষ মো. মাহেদুল আলমের বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ উঠেছে।
তার বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ দিয়ে প্রধান শিক্ষক হওয়া, অর্থ আত্মসাৎ, জাল স্বাক্ষর ও নানা অনিয়মসহ ১৪টি অভিযোগের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।
গত মঙ্গলবার (৬ মে) বিকেলে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মণ অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, অভিযোগপত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে অভিযোগকারী শিক্ষক ও কর্মচারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে জানান, তারা কোনো প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর করেননি।
ভুক্তভোগী শিক্ষক মাকসুদুর রহমান, রেজাউল করিম ও কর্মচারী হায়দার আলী বলেন, আমরা রংপুর জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও মিঠাপুকুর ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম। বিচার না পেয়ে আবার নতুন করে অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাহেদুল আলম ২০০২ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হন এবং বিএড স্কেল দাবি করেন। কিন্তু ২০০৫ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বিএড কোর্সে ফেল করেন। এরপর ভুয়া সনদে ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্য রাশেক রহমান ও রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডলের সুপারিশে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান।
তিনি ২০০৮ সালে আবার বিএড স্কেল গ্রহণ করেন, যা একই ব্যক্তির জন্য বিধিবহির্ভূত। টাইম স্কেলও অগ্রিম নিয়ে অতিরিক্ত সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন।
২০১৬-২০২৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আত্মসাৎ, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে অর্থ উত্তোলন, ফরম পূরণের অর্থ ফেরত না দেওয়া, রেজিস্ট্রেশন জালিয়াতি, ছুটি না নিয়ে বেতন উত্তোলনসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
শুধু ২০২২ ও ২০২৪ সালে প্রায় দেড় লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি করা হয়। ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ১৯ হাজার ১৩০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগকারীরা জানান, মাহেদুল আলম উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের থানা কমিটির সদস্য ছিলেন এবং বিএনপি-জামায়াত নেতাদেরও ম্যানেজ করে চলেছেন। তিনি পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সুরক্ষা ও সহায়তায় সব অনিয়ম করে যাচ্ছেন।
মিঠাপুকুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মমিন মন্ডল বলেন, আমি দুটি উপজেলার দায়িত্বে থাকায় সময় দিতে পারিনি। তবে এখন তদন্ত শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, আগের অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তবে নতুন করে কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের ভিত্তিতে সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাকিবুর রহমানকে তদন্তকারী নিয়োগ দেওয়া হলেও কয়েকদিন পর তদন্ত বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমাকে বলা হয়, বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। তাই তদন্ত আর করা হয়নি।
গত ২১ এপ্রিল ‘চুক্তিতে নকল সরবরাহের প্রতিযোগিতা এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পরই মাহেদুল আলম সাংবাদিক খন্দকার রাকিবুল ইসলামকে হাঁটু ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন।
মুঠোফোনে এই হুমকির অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
প্রকাশিত সংবাদ ও ভাইরাল অডিওর জেরে মাহেদুল আলমকে কেন্দ্রসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং পাঁচ কর্মদিবসে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ছয় মাসেও প্রশাসন কোনো তদন্ত শেষ করেনি। বরং অভিযোগকারীদের মীমাংসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগে ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে।
আপনার মতামত লিখুন :