ছদ্মবেশ ধারণ করে দেশ ত্যাগ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তার পরনে ছিলো লুঙ্গি, গেঞ্জি ও মুখে মাস্ক। এভাবেই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছান তিনি। এরপর কড়া গোপনীয়তার সঙ্গে তাকে বিমানে তুলে দেয়া হয়। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে দেশের একটি গণমাধ্যম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (৭ মে) রাত পৌনে একটায় বিমানবন্দরের ভিআইডি টার্মিনালে পোঁছান আবদুল হামিদ। এ সময় সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা তার গাড়ি আটকে দিয়ে পরিচয় জানতে চান। এরপর গাড়িচালক জানান, ভেতরে সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যরা আছেন। পরে গাড়িটিকে সেখানেই অপেক্ষা করতে বলেন আইনের লোকেরা।
গণমাধ্যমটিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্সের খোঁজ চলাকালে একজন গোয়েন্দা কর্মর্কতা তড়িঘরি করে গাড়ির সামনে এসে হাজির হন। সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমোদন রয়েছে বলে জানান তিনি। পরে গাড়িটি বিমানবন্দরের ভেতরে রওনা দেয়।
এ সময় আবদুল হামিদ গাড়িতে বসেই পোশাক পাল্টে ফেলেন। পরনে থাকা লুঙ্গি গেঞ্জি পরিবর্তন করে প্যান্ট ও শার্ট পরে নেন। এক পর্যায়ে সব ধরনের নিরাপত্তা তল্লাশি এড়িয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাকে নির্বিঘ্নে বিমানে তুলে দেন। এ সময় ইমিগ্রেশনে তিনি কূটনৈতিক সুবিধার বিশেষ লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানে উঠার আগে আবদুল হামিদের সাথে ছিলেন সিভিল এভিয়েশন এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এভসেকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা গ্রিন সিগনাল দিলে তল্লাশি এড়িয়ে আবদুল হামিদকে বিমানে তুলে দেন।
আবদুল হামিদ দেশ ছাড়েন কূটনৈতিক সুবিধার বিশেষ পাসপোর্টে (নম্বর ডি০০০১০০১৫)। রাষ্ট্রপতি থাকার সময় ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি তার নামে ১০ বছর মেয়াদি এই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। ২০৩০ সালের পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত এর মেয়াদ রয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের লাল পাসপোর্ট ইতোমধ্যে বাতিল হলেও আবদুল হামিদের পাসপোর্ট বাতিল হয়নি। যা নিয়ে এখন নানারকম প্রশ্ন ডালপালা মেলছে।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমটিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতিরা আমৃত্যু বিচারপতির পদমর্যাদা ভোগ করে থাকেন। এছাড়া বিদ্যমান আইনেও সাবেক রাষ্ট্রপতিদের ব্যবহৃত পাসপোর্ট সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। তবে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অন্যতম দোসর হিসেবে সরকার চাইলে তার পাসপোর্ট বাতিলে বিশেষ নির্দেশনা দিতে পারত। যেহেতু করা হয়নি, তাহলে ধরে নিতে হবে, কোনো বিশেষ কারণেই করা হয়নি এবং শেষ পর্যন্ত এভাবে তাকে দেশত্যাগ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :