প্রায় এক বছর বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখার পর সোর্স কান্ট্রিগুলো থেকে পুনরায় কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। এ লক্ষে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় উন্মুক্তকরণে দুই সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ১৪-১৬ মে মালয়েশিয়ায় ওই দেশের মানবসম্পদ মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
মালয়েশিয়া সরকার এরই মধ্যে ভিসাপ্রাপ্ত ৭ হাজার ৯২৬ জন বাংলাদেশি কর্মী গ্রহণে সম্মত হয়েছে। তাদের অনুসৃত নীতি অনুযায়ী বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলদেশি কর্মীদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে।
এতে আশা করা যায়, বছরে গড়ে ২ লাখ করে বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। বায়রার সাধারণ সদস্যরা সরকারের এ উদ্যোগের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন এবং সরকারের নির্দেশনা মেনে কর্মী প্রেরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সোমবার (১৯ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলন এসব কথা জানান বায়রার সাধারণ সদস্যরা।
তারা বলেন, দুঃখের বিষয় এই যে, বায়রার কতিপয় সদস্য দেশ ও কর্মীদের স্বার্থ বিবেচনা না করে ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে সরকারের সব উদ্যোগ ব্যর্থ করে দেওয়ার অপচেষ্টা শুরু করেছেন। বারবার বহিষ্কৃত যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বিগত ২০১৭-১৮ মেয়াদে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে সরাসরি ব্যবসা করেছেন এবং ২০২২-২৪ মেয়াদে নামে-বেনামে ত্রিবেনী ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-২২), হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (এইচআরডিসি, আরএল-৪৫২), সেলিব্রেটি ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৫০৩) সহ বিভিন্ন এজেন্সির নামে-বেনামে ব্যবসা করে বিপুলসংখ্যক লোক পাঠিয়ে বড় অঙ্কের ব্যবসা করেছেন।
বক্তারা আরও বলেন, তারা অবৈধভাবে মালয়েশিয়া থেকে অতি উচ্চ মূল্যে ভিসা কিনে অভিবাসন ব্যয় সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি করেছেন। কোটাপ্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এসব কর্মী প্রেরণ করে লাভবান হয়েছেন। এসব অবৈধ ব্যবসার কিছু নমুনা আপনার সামনে পেশ করছি। এ ছাড়াও ফখরুল ইসলাম ওয়েলকাম ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল সেন্টারের মাধ্যমে অনুমোদনহীন হাজার হাজার কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন।
‘এসব স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা নিজের স্বার্থের বাইরে কোনো কিছু চিন্তা করতে পারেন না। দেশের অভ্যন্তরে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালানো, মানব পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের মতো মামলা-মোকদ্দমায় ইন্দন যুগিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় রিপোর্ট পাঠিয়েছেন।’
‘এতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের টিআইপি র্যাঙ্কিংয়ের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে দেশের রপ্তানি খাত এবং জনশক্তি সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মালয়েশিয়া সরকার এরই মধ্যে অন্যান্য সোর্স কান্ট্রি থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু করলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসব মামলা-মোকদ্দমার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে অনীহা প্রকাশ করছে।’
‘এই প্রেক্ষিতে সরকারের উচিত হবে এসব কুচক্রী মহল ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিদের কথায় প্রভাবিত না হয়ে মালয়েশিয়া সরকারের অনুসৃত নীতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে স্বল্প ব্যয় ও নিরাপদ অভিবাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা করা। অন্যথায়, মালয়েশিয়া সরকার অন্যান্য সোর্স কান্ট্রি হতে প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ করবে। ফলশ্রুতিতে মালয়েশিয়ার অতীব সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারে বাংলাদেশী কর্মীগণ বৈধভাবে যেতে পারবেন না।’
বয়রার সদস্যরা বলেন, এতে করে অবৈধভাবে বা ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে, যার পরিণাম হিসেবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দীর্ঘ দিনের মতো বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারের সিদ্ধান্তহীনতাই এ জন্য দায়ী হবে।
‘এ অবস্থায় সরকারের উচিত হবে ভিত্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করে দেশে একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা। আগামী ২১-২২ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ মিটিং-এ রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের মধ্যে বিরাজমান সিন্ডিকেট-এন্টিসিন্ডিকেট সংক্রান্ত বিরোধকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশের বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থানের স্বার্কেই সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।’
‘সুতরাং মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেশ ও কর্মীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি পুনরায় উন্মুক্তকরণের ব্যবস্থা করা অতীব জরুরি।’
সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য দেন বায়রার সদস্য আল আকাবা এসোসিয়েটের আতিকুর রহমান আতিক, এডভেন্ট ওভারসিজের হাসান মাহমুদ, বায়রা সদস্য আলি আজ্জম জালাল, আজিজুর রহমান সারোয়ার, আবদুল মান্নান, সাদ্দাম হোসেন, মনিরুজ্জামান, ইকবাল হোসেন, কাজী আক্তার হোসেন ও মোহাম্মদ আলম বাহার আলম মজুমদার।