‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সচিবালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিক্ষোভ করেছেন সরকারি কর্মচারীরা।
সোমবার (২৬ মে) দিনভর বিক্ষোভের পর মঙ্গলবারও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ সংশোধন করে নতুন এই অধ্যাদেশ অনুমোদিত হয়। এরপর সোমবার (২৬ মে) এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। গেজেট প্রকাশের পরই কর্মচারীরা বিক্ষোভে নামেন।
নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী চারটি কর্মকাণ্ডকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে- অনানুগত্য ও কাজে বাধা সৃষ্টি, একক বা দলবদ্ধভাবে কাজে অনুপস্থিতি, অন্যকে কাজ থেকে বিরত থাকতে উসকানি ও অন্যকে কাজ করতে বাধা প্রদান।
এসব অপরাধের জন্য তিন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে- বরখাস্ত, চাকরিচ্যুতি ও পদ, বেতন গ্রেড অবনমন।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবেন। জবাব বিবেচনায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করলে উপযুক্ত শাস্তি আরোপ করা যাবে। তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। শুধু পুনর্বিবেচনার আবেদন করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীরা বলছেন, এই অধ্যাদেশ তাদের মতপ্রকাশ, প্রতিবাদ ও আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করবে। চাকরির নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি কর্মকর্তাদের যে কোনো সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হবে। তারা আশঙ্কা করছেন, এটি দিয়ে ভিন্নমতাবলম্বীদের টার্গেট করে বরখাস্ত করা সহজ হবে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবীর বলেন, ‘এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে বসদের অন্যায় আদেশও মানতে বাধ্য হবে কর্মচারীরা। আর না মানলে চাকরি থাকবে না।’
সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা না দিলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কর্মচারীদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, ২০১৮ সালের যেসব বিতর্কিত সংশোধন ছিল, তা বাদ দিয়েই মূল আইনটি পুনরায় কার্যকর করা হয়েছে। আপত্তি থাকলে কর্মচারীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারেন।
সচিবালয়ের ফটক বন্ধ হওয়াসহ প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটেছে বলে জানা গেছে। অনেকে বলছেন, জনগণের সেবা ব্যাহত করে আন্দোলন করা কতটা যুক্তিসঙ্গত সেটাও ভাবনার বিষয়।
আপনার মতামত লিখুন :