গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগামী সপ্তাহেই ট্রাইব্যুনালে এই অভিযোগ জমা দিতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন টিম। অভিযোগ গৃহীত হলে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম।
৫ আগস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে মামলার অপর দুই অভিযুক্ত হলেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম জানান, আমরা আশা করছি, ঈদুল আজহার ছুটির আগেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে পারব। চার্জ দাখিলের মাধ্যমেই এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চলতি বছরের ১২ মে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্তে শেখ হাসিনাকে ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রথম অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে উস্কানি, ষড়যন্ত্র ও প্ররোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে শেখ হাসিনার একটি সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও উপস্থাপন করা হবে, যেখানে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে উল্লেখ করেন।
প্রসিকিউটর তামীম জানান, শেখ হাসিনার কথোপকথনের দুটি অডিও রেকর্ড এবং জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনাবলির ভিডিও ফুটেজ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, এই মামলায় আনুমানিক ৫০ জন সাক্ষী উপস্থাপন করা হবে এবং ডিজিটাল প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
যেহেতু শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক, তাই ট্রাইব্যুনাল তাদের হাজির করার জন্য নোটিশ জারি করবে। বিজ্ঞপ্তিটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশের পরও তারা উপস্থিত না হলে, আদালত তাদের পলাতক ঘোষণা করবে এবং রাষ্ট্রীয় আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স কাউন্সিল) নিযুক্ত করা হবে।
তৃতীয় অভিযুক্ত, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বর্তমানে গ্রেপ্তার অবস্থায় রয়েছেন এবং তাকে ট্রাইব্যুনালে সরাসরি হাজির করা হবে।
বিচার শুরুর সম্ভাব্য সময় ও প্রক্রিয়া
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, চার্জ দাখিলের পর হবে অভিযোগ গঠনের শুনানি। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা, যুক্তিতর্ক এবং শেষে রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে উল্লেখ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এ বিচার সম্পন্ন হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।
ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত ২৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল সম্পন্ন হয়েছে, আর শেখ হাসিনার মামলাটি দ্বিতীয়। বাকি ২৩টি মামলার তদন্ত চলছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
আপনার মতামত লিখুন :