বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ০২:৫২ পিএম

মায়ের ওষুধ কিনতে গিয়ে গুলিতে মৃত্যু ছেলের, শোকে মায়েরও মৃত্যু

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ০২:৫২ পিএম

নিহত সৈকত চন্দ্র দে সুমন। ছবি- সংগৃহীত

নিহত সৈকত চন্দ্র দে সুমন। ছবি- সংগৃহীত

‘বুকের পাঁজরে গুলি লেগে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েছিলেন সৈকত চন্দ্র দে সুমন (৪৩)। গত বছরের ২০ জুলাই, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকার শনির আখড়া বাজারের গলিতে ছিলেন তিনি। এক হাতে মায়ের প্রেসক্রিপশন, অন্য হাতে ওষুধের প্যাকেট। গুলিবিদ্ধ হওয়ার মুহূর্তে ফোনে কথা বলছিলেন স্ত্রী স্বপ্না রানীর সঙ্গে। স্ত্রীর ভাষায়, ‘হঠাৎ ফোনটা কেটে গেল।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল ঢাকায় পুলিশের গুলিতে একের পর এক প্রাণ ঝরছিল। রাজপথে উত্তাল জনগণের মাঝে ছিলেন না সুমন। তিনি ছিলেন ঘরে ফেরার তাড়নায়, মায়ের জন্য দুশ্চিন্তায়। কিন্তু সেই পথেই কেড়ে নেওয়া হলো এক পরিবারে একমাত্র ভরসা, এক সন্তানের বাবাকে। নিহত হওয়ার পরে তার মরদেহ স্থানীয়রা পাশের গলিতে এনে রাখে।

শনির আখড়ার রুপসী গার্মেন্টস গলির ভাড়া বাসায় থাকতেন সুমন।

তার স্ত্রী স্বপ্না রানী বলেন, ‘শাশুড়ি ছিলেন অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এনেছিলাম। কয়েকটা হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা করাচ্ছিলাম। সেদিন সন্ধ্যায় ওষুধ কিনে বাসায় ফিরছিল সুমন। কিন্তু গুলিতে ও পড়ে যায় রাস্তায়। আমি ছুটে যাই—তখন দেখি ওর নিথর দেহ পড়ে আছে।’

সুমনের ছোট ভাই চন্দন বলেন, ‘পরদিন ভোরে মরদেহ যাত্রাবাড়ী থানায় নেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ ময়নাতদন্তও করল না, জিডিও নেয়নি। উপায় না দেখে পরামর্শে মরদেহ বাড়িতে এনে ধর্মীয় রীতিতে শ্রাদ্ধ করে দাফন করি।’

চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদি গ্রামে ১৯৮১ সালের ১ মে জন্ম সুমনের। বাবা ছিলেন প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষক, মা গৃহিণী। বড় সন্তান হিসেবে পরিবারে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তরুণ বয়সেই। ১৯৯৭ সালে বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯৯ সালে মতলব ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০০২ সালে একই কলেজ থেকে বি.কম পাশ করেন তিনি।

২০০৩ সাল থেকে আকিজ গ্রুপ, গ্রামীণ ব্যাংক, স্কয়ার টেক্সটাইল, ব্র্যাক, স্কুলে শিক্ষকতা, বিভিন্ন কর্মস্থলে কাজের পর ২০১৬ সালে মতিঝিল আনন্দ হাউজিংয়ে হিসাবরক্ষক পদে চাকরি নেন। ভাই চন্দনের সঙ্গে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সন্ধ্যায় তিনটি টিউশন করিয়ে চলত সংসার। দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, মায়ের চিকিৎসা সবই চালাতেন তিনি।

চন্দন বলেন, ‘আমার বড় ভাই ছাত্রজীবনে টিউশন করে আমাদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। আমাদের বাবার সামান্য আয়ে চলত না। তিনিই আমাদের বাবার জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন। ভাই ছিলেন বন্ধু, অভিভাবক, ভরসা। মা ঢাকায় এলে ভাইয়ের বাসায়ই থাকতেন। সেদিন মায়ের ওষুধ আনতে গিয়ে শহীদ হন তিনি। ভাইয়ের মৃত্যুর শোকেই সাত মাস পর মাও মারা যান।’

স্বপ্না রানী দে, স্ত্রী। প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন ২০১২ সালে। সুমনের মৃত্যুতে সব কিছুই বদলে গেছে। তিনি বলেন, ‘সেদিন আমাদের ঘরে ছিল মাত্র ২৫০ টাকা। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সাহায্যে দাফন শেষ করি। পরে রংপুরে বাবার বাড়িতে চলে আসি। সন্তানেরা এখন এখানেই পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে ধ্রুবকে ক্রিকেটার আর মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন। বিকেএসপিতে ভর্তি করানোর কথাও বলতেন। কিন্তু আজ আমরা সম্পূর্ণ নিঃস্ব। আমার পড়াশোনা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত, চাকরি নাই, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

সরকারি সহায়তা সম্পর্কে তিনি জানান, ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ লাখ, জামায়াত থেকে ২ লাখ এবং বিএনপি থেকে ৫০ হাজার টাকা পেয়েছি। এখন ওই টাকা থেকেই সন্তানদের খরচ চলে। কিন্তু এটা তো বেশি দিন চলবে না।’

স্বপ্না রানীর একটাই দাবি, ‘আমার স্বামী কোনো রাজনীতিতে ছিল না। সে ছিল শুধু একজন দায়িত্বশীল ছেলে, স্বামী, পিতা। তার মৃত্যুর বিচার চাই। রাষ্ট্র যদি ন্যায্য বিচার দিতে না পারে, তাহলে আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!