জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও এর অন্যতম প্রতীক হয়ে ওঠা ‘চোখে-মুখে লাল কাপড়’ ও ‘লাল প্রোফাইল পিকচার’ কর্মসূচির সূচনা কে করেছিলেন—তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ফের শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনটি পক্ষই নিজেদের কৃতিত্ব দাবি করে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করছেন।
শিবিরের দাবি: পরিকল্পনার সূত্রপাত আমাদের
ঢাবি শাখা ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতি এস এম ফরহাদ গণমাধ্যমে বলেন, প্রথমবারের মতো লাল প্রোফাইল পিকচার ও মুখে-কপালে লাল কাপড় বাঁধার আইডিয়া আসে সংগঠনের তৎকালীন সভাপতি সাদিক কায়েমের সঙ্গে আলোচনা থেকে।
তিনি বলেন, টেলিগ্রাম গ্রুপে এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয় এবং সেখান থেকেই পরবর্তীতে তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গ্রুপে শেয়ার করা হয়।
তবে এ দাবিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবদুল কাদের। তার ভাষ্য, আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে কর্মসূচি নির্ধারণ হতো। ছাত্রদলের নেতাদের পরামর্শেই ‘লাল ব্যাজ ধারণ’-এর প্রস্তাব আসে, যা পরবর্তীতে ‘লাল কাপড় ও প্রোফাইল’-এ রূপ নেয়।
ছাত্রদলের যুক্তি: বিএনপির নেতৃত্বে প্রথম প্রস্তাব
ছাত্রদলের সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন দাবি করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শেই তারা ‘কালো ব্যাজ’-এর পরিবর্তে ‘লাল ব্যাজ’ ধারণের উদ্যোগ নেন।
নাসিরের ভাষ্য, তারাই প্রথম চোখে-মুখে লাল কাপড় ও প্রোফাইল পিকচার লাল করার ধারণা দেন এবং এটি নিয়ে টেলিগ্রামে মিটিংও হয়। তবে এ দাবিকে ভিত্তিহীন বলছেন রিফাত রশীদ।
রিফাতের পাল্টা যুক্তি: লাল ডিপি আসলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশীদ তার ফেসবুক পোস্টে স্পষ্ট করে বলেন, ‘ডিপি লাল করার ধারণা কোনো একক ব্যক্তির নয়।’ তার ভাষ্য, নাসির ভাই ছিলেন ‘লাল ব্যাজ মিছিল’-এর পক্ষে, কিন্তু ডিপি লাল করার আলাপ কেউ করেননি।
তার মতে, এটি ছিল একাধিক জনের যৌথ চিন্তা ও বাস্তবায়নের ফল। ছোটভাই নাহিদের ইন্সট্যান্ট ভিজ্যুয়াল প্রপোজাল থেকেই ব্যাপকতা পায় এই ধারনা।
টেলিগ্রাম চ্যাট কি বলে?
গণমাধ্যমে থাকা ২৯ জুলাইয়ের কিছু টেলিগ্রাম চ্যাট বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেদিন ‘2024’ নামের একটি গ্রুপে সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ ও মহিউদ্দিন খান লাল কাপড়, হ্যাশট্যাগ ও অনলাইন প্রচারের বিষয়ে আলোচনা করেন।
সেখানে সাদিকের পাঠানো প্রেস রিলিজে ‘কালো কাপড়’ উল্লেখ থাকলেও ফরহাদের প্রস্তাবে ‘লাল কাপড়’ ও অনলাইন প্রচারের ধারণা উঠে আসে। একপর্যায়ে #RedForJustice, #StudentsInRed সহ আরও ১০টি হ্যাশট্যাগ প্রস্তাব করা হয়।
পরবর্তীতে সাদিকের লেখা প্রেস রিলিজটি ‘July Movement (Journalists)’ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অফিসিয়াল টেলিগ্রামে পাঠানো হয়—যেখানে ৯ দফা দাবি ও বার্তা প্রেরক হিসেবে মাহিন সরকারের নাম যুক্ত ছিল।
তবে প্রেস রিলিজের উৎস কার, সেটি নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। তবে মাহিন সরকারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।