রাত ১টা। তখন শুরু হয় ইউরো ফুটবল ফাইনাল। খেলায় ইংল্যান্ড এক গোল দিতে পারলেও শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে হার মানে স্পেনের কাছে। কিন্তু হার মানেনি বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইতিহাসে ওই রাতের জয় ছিল আরও গভীর- বাংলাদেশের তরুণদের কণ্ঠে গর্জে উঠেছিল নতুন এক গণঅভ্যুত্থানের সূচনা।
গত বছরের ১৪ জুলাই, এক বিস্ফোরক মন্তব্যে গোটা জাতিকে নাড়া দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের কটাক্ষ করে তিনি বলেছিলেন,
‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা না পেলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?’
এই এক বাক্যের কারণেই আগুন জ্বলে ওঠে বাংলাদেশজুড়ে। স্বাধীন দেশের মাটিতে নিজের ন্যায্য অধিকার চাইতে গিয়েও বারবার ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ তকমা পাওয়া এই প্রজন্ম-২০২৪ এর লড়াইয়ে আর সেই অপবাদ মেনে নেয়নি।
রাতভর উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সে সময় শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে সেদিন রাত ১০টা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে জড়ো হতে থাকেন শত শত শিক্ষার্থী। ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা গড়ায় হাজারে। মধ্যরাতে হলের গেটে বাঁধা দিলেও ছাত্রলীগ থামাতে পারেনি শিক্ষার্থীদের স্রোত। কেউ গেট ভেঙে, কেউ তালা ভেঙে রাজপথে নেমে আসেন।
সব হলের ছাত্রছাত্রী একত্রে বেরিয়ে আসেন প্রতিবাদের মিছিলে। বিশেষ করে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল নজরকাড়া- ঢাবির প্রতিটি হল থেকে তালা ভেঙে বের হয়ে তারা যোগ দেন সেই মধ্যরাতের আন্দোলনে। এককথায়, এ ছিল গর্জে ওঠা এক প্রজন্মের অভ্যুত্থান।
এদিকে একই চিত্র শাহবাগ মোড়েও দেখা যায়, তখন সেখানে পুলিশের কঠোর নজরদারি। বাইরের কেউ ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছিল না।
এদিন আন্দোলনকারীরা যখন টিএসসি থেকে ভিসি চত্বর পর্যন্ত অবস্থান নেন, তখন মধুর ক্যান্টিনে জড়ো হয় ছাত্রলীগ। দু’পক্ষের মধ্যে স্লোগান পাল্টাপাল্টি হলেও সেদিন রাতটা হামলা ছাড়া কেটেছিল। কিন্তু উত্তেজনা ছিল টানটান।
স্মারকলিপি ও পথে পথে বাধা
দিনের শুরুটাও ছিল ঘটনাবহুল। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা গণপদযাত্রা শেষে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। পথে পথে তাদের বাধা দেওয়া হয়, ব্যারিকেড তৈরি করা হয়, তবু তারা থামেননি। শেষ পর্যন্ত ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দেন।
আন্দোলনের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম সেদিন বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই- কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস পাচ্ছি না।’
হারল ইংল্যান্ড, জিতল বাংলাদেশ
১৪ জুলাই শুধু এক রাত নয়, ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এক ঘোষণা। যেখানে ইংল্যান্ড মাঠে হারলেও, রাজপথে লড়াই শুরু করেছিল বাংলাদেশ। আর সেই লড়াইয়ের কারণে জয়ও হয় তাদের।