লক্ষ্মীপুরে টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রয়া দু’শ পরিবার। এর ফলে কোমর পরিমাণ পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এদিকে বুক পরিমাণ পানিতে ডুবে আছে ফসলি জমি। গতবারও ঠিক এই কারণে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। এবারও চাষাবাদ নেমেছে একই দৃশ্য। এতে করে হতাশায় ভুগছে স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পূর্ব পাশে একটি খাল রয়েছে। এ খালের বিভিন্ন অংশে গড়ে উঠেছে চলাচলের রাস্তা। এছাড়া কয়েকটি সরু কালভার্ট রয়েছে, সেগুলোর নিচে পাইপ লাগানো।
মিয়ারবেড়ী, সুতারগোপটা বাজারের পূর্ব পাশের অধিকাংশ দোকানই এই খালের ভেতর। একই সঙ্গে খালে প্রচুর কচুরিপানাসহ বর্জ্য রয়েছে। এ কারণে বৃষ্টি এলে পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হলে ওই খালসহ আশপাশের এলাকা ডুবে যায়।
রোববার (১৩ জুলাই) সকালে গিয়ে দেখা যায়, সুতারগোপটা বাজারের আটটি দোকানের তিনভাগের দুইভাগই খালের ভেতর। বাজার থেকে পূর্বপাশের ব্রিজের দিকে তাকালেই দেখা যায় প্রায় ২৫ ফুট চওড়া একটি খালের ১০ ফুট জুড়ে লম্বায় কয়েকটি জরাজীর্ণ দোকানঘর। এই খালের চলাচলের জন্য ৫-৭ ফুটের কয়েকটি কালভার্ট করে পথ বানিয়েছে স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানায়, এক প্রভাবশালীরা ওই ঘরগুলো নির্মাণ করেছেন।
একই এলাকার গণকবরের সামনের রাস্তায় প্রায় ২ ফুট পানি জমে আছে। আশপাশে চোখ মেললে শুধু পানি। এ পানির কারণে এলাকায় ফাইভ স্টার নামে একটি কিন্ডারগার্টেন ডুবে গেছে । এতে গত কয়েকদিন সেখানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ফলে সামনেই দুটি ঘরে এখন পাঠদান চালু রাখা হয়েছে।
কৃষক ইসমাইল হোসেন জানায়, টানা বৃষ্টির কারণে আমার আমন বীজতলা ডুবে গেছে। গতবছর তিনবার বীজতলা করেও আবাদ করতে পারিনি শুধু জলাবদ্ধতার কারণে। এবারও জমিতে প্রায় বুক পানি।
কৃষক ইসমাইল হোসেন আরও জানায়, খাল-বিল অবৈধ দখলে থাকার কারণে বৃষ্টির পানিতে বের হতে পারে না, এর ফলে আমাদের জমিগুলো ডুবে থাকে। যদি পানি নিস্কাশন না হয় দ্রুত সময়ের মধ্যে, তাহলে এবারও আবাদ করা সম্ভব হবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জহির আহমেদ বলেন, ‘৩৭৫ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। চাষাবাদের জন্য পানি কমলে ফের বীজতলা করতে হবে। ১১০০ হেক্টর জমির আউশ পানিতে লেপটে রয়েছে। প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯৫ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত আছে। দ্রুত পানি নিস্কাশন না হলে কৃষক বড়ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন হবে।
এদিকে এলাকাবাসীদের সুতারগোপটা এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, ‘মেঘনার পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। ফলে জোয়ারের পানি প্রবেশের সুযোগ নেই। বৃষ্টির পানিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অসংখ্য অবৈধ দখলদার আছে, প্রয়োজনের তুলাই ছোট কালভার্ট রয়েছে, খাল দখল করে মানুষ বাড়িঘরে যাওয়ার জন্য কিছু রাস্তা করেছে, এজন্য পানি বের হতে পারছে না। আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করবো। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম আমাদের চলমান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ঘটনাটি আমরা প্রশাসনকে অবহিত করব। এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে চেষ্টা করব।