‘এক বছর হয়ে গেল! এখনো মনে হয় এই তো সেদিন। মনে হয়, ছেলেটা ফিরে এসে আবার ‘বাবা’ বলে ডাকবে। কিন্তু সবটাই কল্পনা। ছেলে আর কোনো দিন ফিরবে না। কষ্ট সহ্য করতে না পারলে মোবাইল বের করে ছেলের ছবি দেখি। পাশে কেউ থাকলে তাকেও দেখাই। সবাই ছবি দেখে আফসোস করেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। চোখের পানি ছাড়া আমার আর কিছু করার থাকে না।’
অশ্রুসজল চোখে কথাগুলো বলছিলেন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া রেদোয়ান হোসেন সাগরের বাবা আসাদুজ্জামান।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল। সেদিন ময়মনসিংহ শহরের সি কে ঘোষ রোডের মিন্টু কলেজ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান রেদোয়ান হোসেন সাগর (২৪)। সাগর ছিলেন মা–বাবার একমাত্র সন্তান। ছেলেকে হারিয়ে থেমে গেছে তাদের সব স্বপ্ন।
সাগরের মা শোকে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না। আর বাবা আসাদুজ্জামান ছেলের কথা মনে করে নীরবে চোখের জল ফেলেন।
সাগর ছিলেন ময়মনসিংহ শহরের আকুয়া চৌরঙ্গী মোড় এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামানের বড় ছেলে। দুই ভাইবোনের মধ্যে সাগর ছিলেন বড়।
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সাগর ইসলামিয়া একাডেমি থেকে এসএসসি এবং কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ফুলবাড়িয়া কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়। পাশাপাশি একটি কম্পিউটার দোকানে খণ্ডকালীন কাজ করত। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে সে শুরু থেকেই অংশ নেয়। ফেসবুকে আন্দোলনের পক্ষে পোস্ট দিত, ছবি দিত।’
শহীদ হওয়ার দিনটি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ওই দিন বিকেলে সাগর বাসা থেকে বের হয়। মাগরিবের নামাজের পর ছোট মেয়ে মোবাইলে ফোন করে বাসায় ডাকে। বাসায় ফিরে দুঃসংবাদ পাই। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি- সাগর আর নেই। পরদিন বেলা ১১টায় মাদ্রাসা কোয়ার্টার গোরস্তানে তাকে দাফন করি।’
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। তাকে লেখাপড়া করিয়েছি, মানুষ করেছি। ভবিষ্যতে সুন্দর একটি জীবনের স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে। আর কোনো মা-বাবা যেন এমন যন্ত্রণার মধ্যে না পড়ে। কোনো মা-বাবার বুক যেন এভাবে খালি না হয়। আমার ছেলের রক্ত যেন দেশের শান্তি ফেরাতে কাজে লাগে।’
তিনি জানান, সিটি করপোরেশন সাগরের স্মরণে ঘটনাস্থলের পাশে একটি চত্বর নির্মাণ করেছে। তিনি আশা করেন, সেখানে আরও একটি স্থায়ী স্থাপনা হতে পারে।
ছেলের নামে কোনো স্টেডিয়ামের নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কারো নাম বাদ দিয়ে আমার ছেলের নামে স্টেডিয়াম হোক, এটা আমি চাই না। তবে নতুন কোনো স্টেডিয়াম হলে সেখানে ছেলের নাম থাকতে পারে।’
ঘটনাস্থলের সড়কটির নাম ‘শহীদ সাগর সড়ক’ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সাগর হত্যার ঘটনায় তিনি নিজে কোনো মামলা করেননি। তবে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। তার একটাই দাবি- প্রকৃত অপরাধীরা যেন আইনের আওতায় আসে এবং শাস্তি পায়।
আপনার মতামত লিখুন :