সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


  ফখরুল আলম সভাপতি, লিভারপুল বাংলা প্রেস ক্লাব ইউ.কে

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৫, ০১:০১ পিএম

বিলেতের আলোকিতজন

 সেবাকর্মে এক লড়াকু সৈনিক

  ফখরুল আলম সভাপতি, লিভারপুল বাংলা প্রেস ক্লাব ইউ.কে

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৫, ০১:০১ পিএম

মোজাহিদ খান। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

মোজাহিদ খান। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বিলেতে বাংলাদেশি কমিউনিটির অবস্থান বর্তমানে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেকটাই শক্ত এক ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ব্রিটিশ মূলধারার বাঙালি কমিউনিটির আজকের এই সম্মানজনক স্থানে পৌঁছাতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। বিলেতের বাংলাদেশি কমিউনিটির সাফল্যগাথা ও অগ্রযাত্রায় যেসব সাহসী যোদ্ধারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- মোজাহিদ খান এমবিই ডিএল।

বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় ওল্ডহাম এই শহরের বাঙালি কমিউনিটির মানুষজন যুগ যুগ ধরে কমিউনিটির কাজ করে ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা প্রশংসায় ভাসছেন। তাদের মধ্যে কিছু মেধা কর্মদক্ষতা আর সৃজনশীল মানুষের কারণে বাংলাদেশি মানুষের মুখ দিন দিন উজ্জ্বল হচ্ছে। তাদেরই মধ্যে একজন হলেন- কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মোজাহিদ খান এমবিই ডিএল।

 ব্রিটেনের তৃতীয় রাজা চার্লসের জন্মদিনে ২০২৫ সালে ব্রিটেনের কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখায় রাজকীয় সম্মাননা পেয়েছেন তিনি যা মেম্বার অব দ্য ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার (এমবিই)। ফলে তাকে নিয়ে বাঙালি কমিউনিটি আরও অনেক পথ এগিয়ে নেওয়ার যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। ওল্ডহাম শহরের খুবই পরিচিত মুখ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মোজাহিদ খান। পুরো ব্রিটেনজুড়ে যার পরিচিতি অনেক। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার পল্লি গাঁয়ের সেই মোজাহিদ খান আজ বিশ্বদরবারে আবারও নিজ দেশের মুখ উজ্জ্বল করে তুলছেন। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাজ্যের সম্মানসূচক এমবিই (মেম্বার অব দ্য মোস্ট এক্সলেন্ট অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার) এই উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। যা আগামী কিছুদিনের মধ্যেই রাজপরিবারের অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এই অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন। 

বাংলাদেশ জন্ম নেওয়া এই কর্মবীর ৭০ ‘দশকে বিলেতে পাড়ি জমান মা-বাবার সঙ্গে। তিনি বহুজাতিক কমিউনিটির ভিড়ে স্কুল-কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি আগামীর সুন্দর জীবন গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কমিউনিটিতে নিজেকে উৎসর্গ করছেন। তার হৃদয়ে লুকায়িত ছিল এক অজানা স্বপ্ন যা খুব কাছে থেকে দেখেছেন বাবার হাত ধরে। তার পিতা মরহুম মোবাশ্বির খান তিনি ও ছিলেন একজন কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব। দীর্ঘকাল ধরে তিনি ওল্ডহাম বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধানের দায়িত্বরত ছিলেন। এখানকার কমিউনিটিতে তার পিতার যথেষ্ট অবদার রয়েছে। ২০১০ সালে পিতা মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি কমিউনিটির সর্বক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে নিজকে জনসেবায় নিয়োজিত করেন। মূলত বাবার দেখানো পথেই তিনি হাটছিলেন। 

তার কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা আর সৃজনশীলতার কারণে ব্রিটেনের রাণীর প্রতিনিধি গ্রেটার ম্যানচেস্টারের লড লেফটেন্যান্টের পক্ষথেকে মোজাহিদ খান কে ডেপুটি লেফটেন্যান্ট (ডিএল) পদে নিয়োগ প্রদান করা হয় ২০২১ সালে। কর্মোদ্যমী ও কর্মযোগী মানুষটি অক্লান্তভাবে কয়েক যুগ ধরে নিরলস প্রচেষ্টায় কমিউনিটিতে সেবামূলক কাজ করে এই প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।

ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির সাফল্যগাথা নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘বিজনেস আমেরিকা’ ম্যাগাজিন এ বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী প্রবাসী বাংলাদেশির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে মোজাহিদ খান এমবিই ডিএল একজন। ম্যাগাজিনটিতে তুলে ধরা হয়েছে তার পুরো কর্মময় জীবনের একটি গল্প।

তিনি শুধুই সমাজসেবায় সীমাদ্ধ নন তার কাজের পরিধি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প-সাহিত্য-ক্রীড়াসহ সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনে তার বিচরণ রয়েছে। ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের ব্যবসার সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে কার্যকরী নেটওয়ার্কিং গড়ে তুলতে তিনি দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশি বর্তমান প্রজন্মকে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে এসব ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের ব্যবসা-বাণিজ্যর প্রসার উন্নতি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে বহু সভা সমাবেশ তিনি করেছেন।

আমাদের সকলের জীবনের কিছু না কিছু অনুপ্রেরণামূলক গল্প থেকেই যায়। আর এসব অনুপ্রেরণামূলক গল্পের কারণে অনেকের জীবন পরিবর্তন হয়ে যায়। ঠিক তেমনই এক অনুপ্রেরণামূলক গল্প ‘দি গিফট অফ গিভিং’ বইটি লিখে মোজাহিদ খান এমবিই ডিএল ব্রিটেনের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সাড়া জাগিয়ে তুলছেন। বইটিতে তিনি তার জীবনের ওপর বিশেষ করে পল্লি গ্রাম থেকে উঠে এসে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প তুলে ধরেছেন। অনেক পাঠকই তার বইয়ের কারণে তাদের নিজ জীবনের মোড় ঘুরিয়ে ফেলেছেন। প্রত্যেকটি মানুষের এ ধরনের অনুপ্রেরণামূলক বই পড়া খুবই দরকার। জীবনকে বদলে দিতে মোজাহিদ খানের মতো মানুষদের বর্তমান সমাজে খুবই প্রয়োজন।

বিশ্বনাথের সিঙ্গারকাছ গ্রামের এই কৃতীসন্তান জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে তিনি ১৯৭৮ সালের ৩১ জুলাই পিতা-মাতার সঙ্গে বিলেতে পাড়ি জমান। সেখান থেকে তিনি প্রথমে ওল্ডহাম ‘সেইন্ট হিলডাস প্রাইমারি স্কুল’ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ‘দি গ্রেনজ হাই স্কুল’ থেকে ১৯৮১ জিসিএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ‘ওল্ডহাম কলেজ’ এ ভর্তি হন। কলেজ জীবন শেষে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ‘ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিট্রন ইউনিভার্সিটি’ থেকে বিএ অনার্স করেন। অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখলেও সেই স্বপ্ন আর পূরণ করতে পারেননি, ঠিক সেই সময়টাতেই পিতার অসুস্থতার কারণে সংসারের হাল ধরতে হয় পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। যে কারণে তিনি ছাত্রজীবন শেষের আগেই কর্মক্ষেত্রে পা রাখলেন। প্রথমে তিনি ওল্ডহাম কাউন্সিল থেকে কর্মজীবনের সূচনা করেন। 
বিলেতের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন মোজাহিদ খানকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করেছে। তা ছাড়াও দেশে-বিদেশে তিনি অনেক এচিভমেন্ট অর্জন করেছেন। লোকাল বেশ কয়েকটি মেইনস্টিম চ্যারেটি সংগঠনের বোর্ড মেম্বার এবং উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো এডুকেশন ট্রাস্ট, লোকাল মসজিদ-মাদ্রাসা, হেলথ সেন্টারসহ আরও অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তিনি যুগ যুগ ধরে কাজ করে আসছেন।

ব্যক্তিজীবনে তিনি ২ সন্তানের জনক। তার স্ত্রী তাহমিনা খান বিবিসিতে কর্মরত ছিলেন। মেয়ে সায়েরা খান ব্যাংক অফ আমেরিকাতে কর্মরত আছেন। একমাত্র ছেলে  মহসিন খান উচ্চ শিক্ষা শেষে কর্মজীবনে পা রাখছেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যের ওল্ডহাম শহরে বসবাস করছেন।

সমাজসেবায় তিনি শুধু ব্রিটেনেই ব্যস্তজীবন কাটাননি, নিজ মাতৃভূমিতেও তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছেন। এরমধ্যে বিশ্বনাথে তার নিজ এলাকায় বাংলাদেশের মানুষের জন্য আর্তমানবতার কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে গড়ে তুলেছেন চিকিৎসা কেন্দ্র ‘ভিলেজ হেলথ সেন্টার’ যেখানে এলাকার হতদরিদ্র লোকজন বিনামূল্যে পাচ্ছেন চিকিৎসাসেবাসহ নানামুখী সুযোগ-সুবিধা। 

একটা সময় ছিল ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা খুবই কষ্টের মধ্যে প্রবাসে তাদের জীবন-জীবিকা অতিবাহিত করেছিলেন। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের অগ্রজরা আজকের এই সোনালি দিন আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন। ঠিক তাদের মতোই এই কর্মবীর মোজাহিদ খান এমবিই ডিএল গত ৩ দশকের ও বেশি সময় কমিউনিটিতে তার শ্রম, মেধা আর বিচক্ষণ সৃজনশীল কৃতিত্বের মাধ্যমে বিলেতের কমিউনিটিতে আলো ছড়িয়েছেন। তার দৃষ্টিতে দুটাই তার নিজের দেশ। উভয় দেশেই সকলের অবদান রাখার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

ডেপুটি লেফটেল্যান্ট নিয়োগ পাওয়া এবং বর্তমানে রাজকীয় সম্মাননা মেম্বার অব দ্য ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার (এমবিই) এ দুটা সম্মাননা প্রাপ্তির ফলে তিনি শুধু ব্রিটেন কেই নয় বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছেন। এমবিই খেতাব প্রাপ্তির পর মোজাহিদ খানের সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে প্রবাস বাংলা অনলাইন টিভি ইউ.কে ও প্রবাস বাংলা পত্রিকা। জাঁকজমকপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, লেখক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ কমিউনিটির গুণীজনেরা এতে উপস্থিত ছিলেন।

কমিউনিটিতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মোজাহিদ খান এমবিই ডিএল পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা। এর মধ্যে রাজকীয় সম্মাননা এমবিই, ফাইনালিস্ট, ফিউশন অ্যাওয়ার্ডস নর্থ-ওয়েস্ট , স্বেচ্ছসেবক কাছে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অ্যাওয়ার্ড , ইয়ং অ্যাচিভার রিকগনিশনসহ বিভিন্ন এচিভমেন্ট তার কর্মজীবনকে অনুপ্রাণিত করে তুলছে।

আমরা মোজাহিদ খান তাদের মতো করে স্বপ্ন দেখা শিখে এখন সাফল্যের ধারাবাহিক পথে অগ্রসর হতে চলেছি। তারা আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে জীবন গড়ার পথে হাঁটতে শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিভাদীপ্ত এই মানুষটির কারণেই মূলতঃ ব্রিটিশ বাঙালি নতুন প্রজন্ম আরও সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!