নারী কোপা আমেরিকার ফাইনালে ৮ গোলের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর নাটকীয় টাইব্রেকার জিতে আবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল। তিন দফায় এবং পরে টাইব্রেকারে এগিয়ে থাকার পরও শেষ পর্যন্ত আর পারল না কলম্বিয়া। দুই দলের ফাইনাল ম্যাচটি ৪-৪ গোলে ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৫-৪ ব্যবধানে জিতল ব্রাজিলিয়ানরা। টুর্নামেন্টের ১০ আসরে নবম শিরোপা জিতে নিল তারা। তাদের এই জয়ের মূল কারিগর মার্তা। জোড়া গোল উপহার দেন এই ফরোয়ার্ড।
ব্রাজিল-কলম্বিয়ার ফাইনাল ম্যাচটি ফাইনালের মতোই হয়েছে। দম বন্ধ করা উত্তেজনা আর উত্তুঙ্গ রোমাঞ্চ মিশে থাকল পরতে পরতে। মূল ম্যাচ আর অতিরিক্ত মিনিটে নাটকের কমতি ছিল না। কিন্তু শেষ নয় সেখানেই। টাইব্রেকারেও নাটকীয়তা জমে উঠল দারুণভাবে। সবকিছুর শেষে ফলাফল অবশ্য সেই প্রত্যাশিতই। আরও একবার চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। উইমেন’স কোপা আমেরিকার ফাইনালে কলম্বিয়াকে হারিয়ে আরেকটি শিরোপার সাফল্যে নিজেদের রাঙাল ব্রাজিল। একুয়েডরের কিতোয় শনিবার ফাইনালে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শেষ হয় ৩-৩ সমতায়। অতিরিক্ত মিনিট শেষে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৪-৪। টাইব্রেকারের প্রথম পাঁচটি করে শট শেষেও আলাদা করা যায়নি দুই দলকে। শেষ পর্যন্ত ‘সাডেন ডেথে’ মৃত্যু হয় কলম্বিয়ার সম্ভাবনার। জিতে যায় ব্রাজিল। এই টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের জিততে না পারাটাই বলা যায় অঘটনের। তেমন কিছুর সম্ভাবনাই জাগিয়েছিল কলম্বিয়া। কিন্তু মূল ম্যাচে তিন দফায় ও পরে টাইব্রেকারে এগিয়ে থেকেও তাদের ইতিহাস গড়া হয়নি। হার না মানা মানসিকতায় শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়েনি ব্রাজিল। এই নিয়ে উইমেন’স কোপার ১০ আসরের মধ্যে ৯টিতেই শিরোপা জিতে নিল ব্রাজিলিয়ানরা। প্রথম চার আসরে টানা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০০৬ সালে ফাইনালে তারা হেরে যায় আর্জেন্টিনার কাছে। এরপর এবার নিয়ে তারা চ্যাম্পিয়ন টানা পঞ্চমবার। ফাইনালে ব্রাজিলের নায়ক অবসর ভেঙে এই টুর্নামেন্টের আগে ফেরা কিংবদন্তি মার্তা। ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে গোল করে কলম্বিয়ার মুঠো থেকে জয় বের করে এনে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যান তিনি। অতিরিক্ত সময়েও গোল করে ম্যাচে প্রথমবার এগিয়ে দেন দলকে। পরে টাইব্রেকারে অবশ্য গোল করতে ব্যর্থ হন ৩৯ বছর বয়সি তারকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার খেসারত দিতে হয়নি নারী ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের একজনকে। ম্যাচের ৬০ শতাংশ সময় বল ছিল ব্রাজিলের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বারবার এগিয়ে যায় কলম্বিয়া। ২৫তম মিনিটে তাদের প্রথমবার এগিয়ে দেন লিন্দা কাইসেদো। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের নবম মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্রাজিলকে সমতায় ফেরান আঞ্জেলিনা। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম প্রায় ২৫ মিনিটে তেমন উত্তেজনা ছিল না। পরের ভাগে ম্যাচ জমে ওঠে দারুণভাবে। ৬৯তম মিনিটে আবার এগিয়ে যায় কলম্বিয়া। ৮০তম মিনিটে ব্রাজিলকে সমতায় ফেরান আমান্দা গুতিয়েহেস। সেমিফাইনালেও ২টি গোল তিনি করেছিলেন। ৬ গোল করে যৌথভাবে এবারের আসরের সর্বোচ্চ গোল স্কোরার ২৪ বছর বয়সি ফরোয়ার্ড। ৮৮তম মিনিটে মায়রা রামিরেসের গোলে শিরোপার সুবাস পেতে থাকে কলম্বিয়া। একসময় ট্রফি জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যায় তারা। কিন্তু শেষ দিকে বদলি হিসেবে নামা মার্তা যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে গোল করে বদলে দেন চিত্র। ১০৫তম মিনিটে সেই মার্তার আরেকটি গোল আবার জাগিয়ে তোলে ব্রাজিলের সম্ভাবনা। কিন্তু এই ম্যাচের উত্তেজনা কী এত সহজে শেষ হয়! ১১৫তম মিনিটে কলম্বিয়ার লেইসি সান্তোসের গোল ম্যাচ টেনে নেয় টাইব্রেকারে। সেখানে ব্রাজিলের আঞ্জেলিনা গোল করতে ব্যর্থ হলে এগিয়ে থাকে কলম্বিয়া। কিন্তু তাদের মানুয়েল পাভি পারেননি গোল করতে, পরে সান্তোসের পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন ব্রাজিলের গোলকিপার লরেনা। তখন মার্তার সামনে সুযোগ ছিল শিরোপা নিশ্চিত করার। অনেক নাটকের ম্যাচে তার শট আটকে দেন কলম্বিয়ান গোলকিপার।
আপনার মতামত লিখুন :