বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০৩:০৫ পিএম

ডাকসুর ফল কি জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে

জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০৩:০৫ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে প্রকাশ হয়েছে এবারের ডাকসু নির্বাচনের ফল। এতে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। তারা ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই জয়লাভ করেছে। ডাকসু নির্বাচনের এই পরিস্থিতির বিবেচনায় জনমনে ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে যে, এই ফল জাতীয় নির্বাচনে কি প্রভাব ফেলতে পারে? ফল ঘোষণা হওয়ার পরপরই সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে দানা বেঁধেছে নানাবিধ প্রশ্ন। অনেকের মতে, এই ফল প্রভাব ফেলতে পারে আগামী নির্বাচনেও। তবে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেশের রাজনীতিতে হঠাৎ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল?

গত বছর ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তন হয়েছে এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। সেই থেকেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তরুণদের রাজনৈতিক চিন্তা এবং গণঅভ্যুত্থান পরর্বতী এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি-এনসিপি-জামায়েতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরুণরাও ভোটের মাঠে এখন বেশ সোচ্চার।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার শাসনামলে তৈরি হয়েছিল নির্বাচনব্যবস্থা থেকে তরুণদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার গল্প।

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, নিঃসন্দেহে ডাকসু নির্বাচনের ফলের প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিশেষ ছায়া ফেলবে। কেননা এই নির্বাচনের অনেক প্রার্থীই গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ফলত এর প্রভাব শুধু জাতীয় নির্বাচন নয় পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে।

জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘ডাকসুতে কারা জয়লাভ করল, সেটা জাতীয় রাজনীতিতে একটা ছায়া বা একটা প্রভাব তো অবশ্যই বিস্তার করবে এবং সেটা করাটাই স্বাভাবিক।’

২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে নির্বাচিত নুরুল হক নুর বর্তমানে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি। তিনি ডাকসুতে নির্বাচিত হওয়ার পর রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। এ ছাড়া অতীত ঘাটলেও দেখা যায় ডাকসুতে যারা ভিপি বা জিএস কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের অনেকেই এখন জাতীয় রাজনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। যে কারণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ফল আগামী জাতীয় নির্বাচনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এসব নির্বাচিত প্রার্থীরাও কেউ কেউ অংশ নিতে পারে জাতীয় নির্বাচনে।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বলেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনকে সারা দেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই নির্বাচন কমবেশি জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করবেই।’

এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে (ডাকসু) ঐতিহাসিক গুরুত্বের দিক দিয়ে ‘দ্বিতীয় সংসদ’ বলা হয়। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান কিংবা নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি জাতীয় সংগ্রামে ডাকসু নেতৃত্বরাই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে, দিকনির্দেশনা দিয়েছে দেশের রাজনীতিকে।

ডাকসু নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব সম্পর্কে সাবেক ভিপি ও বর্তমানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এবারের ডাকসু নির্বাচনের প্রত্যাশাটা অনেক বড়। কিন্তু নির্বাচনটা অরাজনৈতিক সংগঠনের নামে করা যাচ্ছে না। যারা বা যে সংগঠনগুলো রাজনীতিতে ভূমিকা রাখে বা রাখবে তারা এই নির্বাচনে তারা সুবিধা করতে পারবে কি না- সেটা একটা দেখার বিষয়। তবে গত বছরের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়িত হতে পারবে কি না সেটা নিয়ে সংশয় কাটছে না। এবারের ডাকসু নির্বাচনে যদি সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হয় তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এর ফল প্রভাব ফেলতে পারে।

ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে ফেলার পক্ষে যেমন বক্তব্য আছে তেমনই বিপক্ষেও আছে বক্তব্য।

ডাকসু নির্বাচনের ফল জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মুশতাক হোসেন বলেন ভিন্ন কথা, তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের ফল জাতীয় নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। বরং ডাকসু নির্বাচনের ফল ছাত্র রাজনীতির ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অতীতেও জাতীয় নির্বাচনের ওপর ডাকসুর ফল এমন কোনো প্রভাব বিস্তার করেনি। সেটা হলে স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচিত হয়েছিল। এরপর জাসদ ছাত্রলীগও নির্বাচিত হয়েছিল, বাসদ ছাত্রলীগও নির্বাচিত হয়েছিল। জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়লে তো জাসদ অনেক বড় দল হতে পারত, সেটা তো হয়নি। নির্বাচন কেমন হবে সেটা তো এখনই বোঝা যাচ্ছে না। তবে এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঢালাওভাবে দলীয় লেজুড়বৃত্তির পরিবর্তে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ যাতে ঘটতে পারে সেই প্রত্যাশা করছি।’

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেস্বর) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ডাকসু নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ডেফিনেটলি একটি মডেল। তবে ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনকে মিলিয়ে ফেলা যাবে না।’

এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ডাকসুর ফল কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই সীমাবদ্ধ। এই ফল জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশও নির্বাচনের ট্রেনে উঠে গেছে বলে মনে করেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এবারের নির্বাচনের পরিবেশ ভালো ছিল, এটাই ছিল আমার প্রথম কোনো ভোট, জাতীয় নির্বাচনে এমন পরিবেশ তৈরি হলে আমার মতো যারা জাতীয় নির্বাচনে কখনো ভোট দেয়নি, তারা আনন্দের সঙ্গে অংশ নেবে বলেই আমার ধারণা।’

এদিকে অনেক শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, আমরা যারা তরুণ ভোটার, আমরা যদি এ রকম পরিবেশ জাতীয় নির্বাচনে পাই তবে আমরা এই নির্বাচনের মতো আগামী জাতীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করব।

Link copied!