আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা বাড়ছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএএফ)।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানানো হয়। সিসিএফের উপদেষ্টা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব ভুয়া তথ্য ছাড়ানো হয়, তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। অনেক দল বা ব্যক্তি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এ ধরনের পোস্ট পরিকল্পিতভাবে ছড়ায়।
বেসরকারি সংস্থা ব্লাস্টের উপ-পরিচালক তাপসী রাবেয়া বলেন, গ্রামে কম শিক্ষিত লোকজনই নয়, শহরের উচ্চ শিক্ষিত অনেকেই অনলাইনে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের ১৫-২৫ শতাংশের বেশিরভাগই আইনের আশ্রয় নিতে চায় না। কারণ, তারা নিজেদের অসচেতনতার কারণে এসব অপরাধের শিকার হন।
সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতাবিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের জ্ঞান অনেক কম। আমাদের নিজেদের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কথা মাথায় রাখতে হবে। নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারে ফটোকার্ড তৈরির মাধ্যমে অনেক ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এসব বিষয় যাচাই ছাড়া শেয়ার করা উচিত নয়।’
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের ২০২৪ সালের প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশের বয়সই ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া আক্রান্তদের প্রায় ৫৯ শতাংশই নারী। অপরাধের ধরনের মধ্যে ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে অ্যাকাউন্ট বেদখলের (হ্যাকিং) শিকার হয়ে শীর্ষে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একইভাবে অপরাধের বহুমাত্রিকতাও যুক্ত হচ্ছে—যার প্রভাবে প্রতিবেদনে ‘অন্যান্য’ ধরনের অপরাধ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এই হারটা সবশেষ গত বছরের প্রতিবেদনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশে। এক বছরে এই হার বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, যার বিষয়ে ব্যবহারকারীদের আগে থেকে কোনো ধারণা থাকে না।
মুশফিকুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৭২ শতাংশ সামাজিক মর্যাদাহানী, ৪০ দশমিক ১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির শিকার এবং প্রায় সবাই মানসিক যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন। এদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮১.২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়েরি এবং ১৮.৭৫ শতাংশ লিখিত অভিযোগ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগকারীদের মধ্যে মাত্র ১২.৫০ মন্তব্য করেননি। সন্তুষ্ট নন ৮৭.৫০ শতাংশ। এসব প্রতারণায় আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিক্ষিত। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৯০ শতাংশ ভুক্তভোগী উচ্চ মাধ্যমিক পাস, ২১ দশমিক ২১ শতাংশ স্নাতক/সম্মান পাস, ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ মাধ্যমিক পাস এবং ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ মাধ্যমিকের নিচে।
এই প্রেক্ষাপটে ১০ম সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (অক্টোবর ২০২৫) বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাপী যেভাবে অক্টোবরকে ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালন করা হয়, বাংলাদেশেও একই সময়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি ২০১৬ সাল থেকে আয়োজন করে আসছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএএফ)।
সংস্থাটি জানায়, এবারও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স কর্তৃক এই ক্যাম্পেইনে অফিসিয়ালি যুক্ত হয়েছে সংগঠনটি। পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা, মাল্টিফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, সফটওয়্যার আপডেট রাখা, সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক না করা— এসব মৌলিক নিয়ম মানা না হলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এমনকি রাষ্ট্রও বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তাই এই ৪টি বিষয়ে অক্টোবর মাসব্যাপী প্রচার কাজ চলবে। এতে অংশ নেন সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।