ভারতের আসন্ন বিহার বিধানসভার নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ তীব্রতর হচ্ছে। রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বাংলাদেশি ‘অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যু—এর মাধ্যমে ভারতীয় রাজনীতিতে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেখানে বিহারে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’ থাকার দাবি তুলেছেন, সেখানে তার বিরোধিতায় মুখ খুলেছেন সর্বভারতীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি।
গত সাপ্তাহে নির্বাচনি এক সভায় ওয়াইসি মোদির বক্তব্যকে সরাসরি বিরোধিতা করে বলেন, ‘বিহারে, বিশেষ করে সীমাঞ্চল অঞ্চলে কোনো বাংলাদেশি নেই। কিন্তু আপনার বাংলাদেশ থেকে একজন বোন দিল্লিতে থাকেন। তাকে বাংলাদেশে পাঠান। তাকে সীমাঞ্চলে নিয়ে আসুন, আমরা তাকে বাংলাদেশে ফেলে দেব।’
এই বক্তব্যে তিনি স্পষ্টতই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ করেন, যিনি গত বছর ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার রোষেরমুখে পদত্যাগ করে দিল্লিতে বসবাস করছেন।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় এক নির্বাচনি সভায় বলেন, ‘বিহারে অনুপ্রবেশকারীদের জন্য কংগ্রেস ও আরজেডি আশ্রয় দিয়েছে। এর ফলে রাজ্যে জনসংখ্যাগত সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, যা নারীদের নিরাপত্তা ও সম্মানের প্রশ্নেও চ্যালেঞ্জ।’
ওয়াইসি এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনি ১১ বছর ধরে কেন্দ্রে আছেন, তাহলে আজ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘সীমাঞ্চলে তার দল পূর্ববর্তী নির্বাচনে পাঁচটি আসন জিতেছে, এবং সেখানকার জনগণ জানেন যে বাংলাদেশি অভিবাসী বলে কিছুই নেই।’
অন্যদিকে বিহারে নির্বাচন কমিশন ‘বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা’ প্রকল্পের আওতায় ভোটার তালিকা যাচাই করছে। এর আওতায় নেপাল, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে আগত কিছু নাগরিকের ভোটার হিসেবে নাম উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি এই কার্যক্রমকে ভোটার তালিকা পরিষ্কারের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখালেও, বিরোধীরা এটিকে সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার হরণ করার ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছে।
আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এই ইস্যুটিকে বিজেপির ‘নির্বাচনি বিভ্রান্তিমূলক কৌশল’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘আপনারা বিহারে ২০ বছর ধরে ক্ষমতায়, আর দিল্লিতে ১১ বছর। আজ হঠাৎ করে অনুপ্রবেশকারীদের কথা মনে পড়ছে?’
উল্লেখ, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুটি ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে বহুদিন ধরেই আলোচিত। তবে নির্বাচনের আগে এই ইস্যু ঘিরে ভোটের সমীকরণ বদলানোর প্রয়াসও স্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে।