লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলি ও আশপাশের অঞ্চল থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরেছেন আরও ৩০৯ জন বাংলাদেশি।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ অভিযানে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার সমন্বয়ে এই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
এতে বলা হয়, ফেরত আসা বাংলাদেশিদের অধিকাংশই মানবপাচারকারীদের প্রলোভনে পড়ে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশের আশায় লিবিয়ায় গিয়েছিলেন। কেউ কেউ কয়েক লাখ টাকা খরচ করে পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সেই পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন।
কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা পাচারকারীদের হাতে প্রতারিত হন—কেউ অপহৃত হন, কেউ নির্যাতনের শিকার, আবার কেউ মাসের পর মাস বন্দিদশায় কাটিয়েছেন।
একাধিক প্রত্যাবাসিত ব্যক্তি জানিয়েছেন, লিবিয়ার বিভিন্ন স্থানে মানবপাচারকারীরা তাদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য নির্যাতন চালাতেন। অনেককে শ্রম দিতে বাধ্য করা হতো বিনা পারিশ্রমিকে। খাদ্য ও চিকিৎসার অভাব, অনিশ্চিত জীবন, আর মৃত্যু-ভয়ের মধ্যেই কেটে যায় তাদের দিনগুলো।
দেশে ফেরার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং পুলিশের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। প্রত্যাবাসিতদের হাতে তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্যসামগ্রী ও প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা তুলে দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে ফিরে এই নাগরিকরা যেন মানবপাচারের ভয়াবহতা ও তাদের দুর্ভোগের অভিজ্ঞতা সমাজে শেয়ার করেন সে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে অন্যরা একই ফাঁদে না পড়েন।
প্রত্যাবাসিতদের পুনর্বাসনে সরকার ও আইওএম যৌথভাবে কাজ করছে। তাদের মানসিক সহায়তা, কাউন্সেলিং ও পুনরায় কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করতে একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আইওএমের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশের নাগরিক এখন লিবিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, যা বর্তমানে মানবপাচারের অন্যতম সক্রিয় রুটে পরিণত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে লিবিয়ার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ায় ওই পথে বিপদের ঝুঁকি আরও বেড়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরা এই নাগরিকদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের তরুণদের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি দেওয়া শুধু জীবনের ঝুঁকি নয়, বরং পুরো পরিবারকে অর্থনৈতিক ও মানসিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়।
সরকার জানিয়েছে, মানবপাচার রোধে সীমান্ত, ট্রাভেল এজেন্সি ও রিক্রুটিং সংস্থাগুলোর ওপর নজরদারি আরও জোরদার করা হচ্ছে এবং যারা এ ধরনের অপরাধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন