ঢাকা শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ছিলেন না উপদেষ্টা আসিফ-মাহফুজ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম । ছবি- সংগৃহীত

বহুল প্রতীক্ষিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম। সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টাদের উপস্থিতি থাকলেও এদিন সাংবাদিকদের চোখে পড়েনি এ দুই উপদেষ্টা।

রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের মতভেদের কারণে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আসিফ ও মাহফুজ উপস্থিত হননি। অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা হিসেবে মাহফুজ আলম।

জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের কাছে ‘জুলাই সনদ’-এ স্বাক্ষরের জন্য এনসিপি তিন দফা দাবি জানিয়েছিল। দফাগুলোর মধ্যে ছিল: জুলাই সনদ সংশোধন, সনদকে স্থায়ীভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি। শেষ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যমত কমিশন সনদে পঞ্চম দফায় কিছু সংস্কার আনে।

এদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।

মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকনসহ অনেক নেতাকে দেখা যায়।

এর আগে বেলা দেড়টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ‘জুলাই যোদ্ধারা’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নিজেদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা এবং পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভে নামেন। পুলিশ তাদের সরানোর জন্য লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরা পাল্টা ইট-পাটকেল ছোড়ে। এতে কয়েকজন আহত হন এবং অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি তাঁবু ও অন্যান্য সরঞ্জামে আগুন ধরে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, লাঠিচার্জ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ চলে। পরে পুলিশ পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে আনে এবং নিরাপত্তা জোরদারের জন্য সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়।

জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ২০ জন উপদেষ্টা। তারা হলেন, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ (অর্থ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি), ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ (পরিকল্পনা), ড. আসিফ নজরুল (আইন ও প্রবাসী কল্যাণ), মোঃ তৌহিদ হোসেন (পররাষ্ট্র), লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (স্বরাষ্ট্র ও কৃষি), আদিলুর রহমান খান (শিল্প ও গৃহায়ন), আলী ইমাম মজুমদার (খাদ্য ও ভূমি), অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (শিক্ষা), মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান (বিদ্যুৎ, সড়ক ও রেলপথ), সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (পরিবেশ ও পানি সম্পদ)।

অন্যান্য উপদেষ্টারা ছিলেন: ফারুক ই আজম, বীর প্রতীক (মুক্তিযুদ্ধ ও ত্রাণ), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন (নৌ ও শ্রম), নূরজাহান বেগম (স্বাস্থ্য), অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার (প্রাথমিক শিক্ষা), ফরিদা আখতার (মৎস্য), শারমীন এস মুরশিদ (সমাজকল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক), ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন (ধর্ম), সুপ্রদীপ চাকমা (পার্বত্য চট্টগ্রাম), শেখ বশিরউদ্দীন (বাণিজ্য, বস্ত্র ও পর্যটন), মোঃ মাহফুজ আলম (তথ্য ও সম্প্রচার) এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকী (সংস্কৃতি বিষয়ক)।

স্বাক্ষর না করা দলগুলো: সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ জাসদ, এনসিপি, গণফোরাম। গণফোরামের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু স্বাক্ষর করেননি।

স্বাক্ষর করা দল ও জোটগুলো: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, আমজনতার দল, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও জাকের পার্টি।