ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

গাফিলতিতেই পুড়ল শাহজালাল বিমানবন্দর

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১২:২৯ পিএম
বিমানবন্দরের আগুন। ছবি - সংগৃহীত

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পেছনে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও পূর্ব সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, বিমানবন্দর ও এর সংশ্লিষ্ট ৮টি বিমানবন্দরের উদ্ধার এবং অগ্নিনির্বাপক যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বারবার জানানো হলেও বেবিচক (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এ চরম গাফিলতির ফলেই ঘটেছে দেশের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।

২০২৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ১৯ বার চিঠি পাঠানো হয় বেবিচকের সদর দপ্তরে। এসব চিঠিতে বারবার উল্লেখ করা হয়, বিমানবন্দরগুলোর অগ্নিনির্বাপক যানবাহন অচল বা ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মান (আইকাও নীতিমালা) বজায় রাখতে কার্যকর অগ্নিনির্বাপক যানবাহন থাকা বাধ্যতামূলক।

কিন্তু চিঠিগুলোতে একাধিকবার গুরুত্ব দিয়ে তাগিদ জানানো হলেও, কোনো ধরনের প্রশাসনিক অনুমোদন বা রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু হয়নি। এমনকি ছোট ত্রুটিগুলো সময়ের সঙ্গে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে- এ আশঙ্কার কথাও ছিল চিঠিগুলোতে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বেবিচকের সদস্য (অপারেশন) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি। তবে সাংবাদিকদের তিনি জানান, ‘প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে বলে আমরা খতিয়ে দেখছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

কিন্তু বাস্তবতা হলো, বারবার চিঠি দিয়েও ব্যবস্থা না নেওয়ায় অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং তা ভয়াবহ বিপর্যয়ে রূপ নেয়।

এদিকে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বেবিচক কর্তৃক এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার কারণে কার্গো ভিলেজে গোয়েন্দা নজরদারি, পেট্রোলিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে পড়ে।

আগে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকলেও ৫ আগস্টের পর তা আর চালু ছিল না। ফলে অগ্নিকাণ্ড শুরুর সময় যথাযথ নজরদারি বা দ্রুত পদক্ষেপ সম্ভব হয়নি। এমনকি পুলিশের একটি ইউনিট উদ্ধারকাজে যোগ দিতে চাইলেও, অনুমতি দেওয়া হয়নি।

গত শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেল ২টা ১৫ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত শাহজালাল বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও তা পুরোপুরি নেভে পরদিন (রোববার) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে।

রপ্তানিকারক সংগঠন ইএবি জানিয়েছে, এ ঘটনায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ‘সন্দেহজনক প্রেক্ষাপট’ তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো একটি পক্ষ হয়তো পরিকল্পিতভাবে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পরিবেশ তৈরি করেছে। এ ছাড়া, ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত অনেক সদস্য নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নাশকতার প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এখন পর্যন্ত তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তদন্ত কার্যক্রম চলছে এবং ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।