জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়লেন সানায়ে তাকাইচি। চীনবিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত ও সামাজিকভাবে রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ তাকাইচি মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) জোটের সমঝোতায় দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম দফার ভোটে অপ্রত্যাশিতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী পদে রান অফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না দেশটিতে। সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবেন তিনি।
জাপানের পার্লামেন্টে মোট ৪৬৫টি আসন রয়েছে। এরমধ্যে ২৩৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তাকাইচি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইউশিহিকো নোদা পান ১৪৯ ভোট। সংসদে এলডিপির একক সংখ্যাগরিষ্টতা না থাকায় বারবার ভেঙে যাচ্ছে জাপানের সরকার। ফলে সংসদের এক মেয়াদে পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন তাকাইচি। দেশটির ১০৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তিনি।
রাজনীতিতে আসার আগে একটি হেভি মেটাল ব্যান্ডের ড্রামার হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। দেশজুড়ে খ্যাতি ছিল লেডি বাইকার হিসেবেও। গত ৪ অক্টোবর ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হয় তাকে। এলিডিপির প্রেসিডেন্ট হওয়ার ছয় দিন পরই কোয়ালিশন পার্টনার কোমেইতো তাকাইচির রক্ষণশীল অবস্থান ও দলের অর্থ কেলেঙ্কারি ইস্যুতে জোট ছাড়ে। ফলে সংস্কারবাদী ডানপন্থি জাপান ইনোভেশন পার্টির (জেআইপি) সঙ্গে নতুন জোট গঠনে বাধ্য হন তাকাইচি। সোমবার সন্ধ্যায় সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
জেআইপি খাদ্যের ওপর ভ্যাট শূন্যে নামানো, করপোরেট অনুদান বাতিল এবং সংসদ সদস্য সংখ্যা কমানোর পক্ষে। তাকাইচি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জাপানের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করবেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই একটি দেশ গড়ে তুলবেন।
তার নিজ শহর নারা থেকে ৭৬ বছর বয়সি তোরু তাকাহাশি বলেন, তাকাইচি মজবুত মানসিকতার মানুষ। তিনি ট্রাম্পের মতো নন, তবে ঠিক-ভুল সম্পর্কে খুব স্পষ্ট।
‘নর্ডিক দেশগুলোর’ মতো নারী নেতৃত্বসমৃদ্ধ একটি মন্ত্রিসভা গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাকাইচি, যেখানে বর্তমানে দেশটিতে নারী মন্ত্রী মাত্র দুইজন। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, নতুন মন্ত্রিসভায় ডানপন্থি সাতসুকি কাতায়ামা অর্থমন্ত্রী ও অর্ধেক আমেরিকান বংশোদ্ভূত কিমি ওনোদা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী হতে পারেন।
তাকাইচি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যাগুলো নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে চান। নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে তিনি মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হওয়া নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তবে তিনি দাম্পত্য আইন পরিবর্তনের বিপক্ষে, যেখানে স্বামী-স্ত্রীকে একই পদবি বহন বাধ্যতামূলক এবং রাজপরিবারে নারী উত্তরাধিকার নিষিদ্ধ রাখার পক্ষে।