গুম ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির ও কারাগারে পাঠানোয় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। পাশাপাশি পলাতক আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিও করেছেন তারা। এক্ষেত্রে ইন্টারপোলে নোটিশ জারির দাবিও জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিও করেছেন গুমের শিকার ব্যক্তিরা।
বুধবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুম-খুনের ৩ মামলায় শুনানি হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগীরা। শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
গুমের শিকার হয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। দীর্ঘসময় থাকতে হয়েছিল আয়নাঘরেও।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাকে ১৬ মাস গুম করে রাখা হয়। আমাকে যখন গুম করে রাখা হয় জয়েন্ট ইন্ট্রোগ্রেশন সেল যেটার কোড নেম আয়নাঘর তার আগের নাম ছিল ব্লাক হোল।’
‘আমাদের ওপর যে অন্যায় করা হয়েছে তা কেউ মুখে বলতে পারবে না। একদিন যদি কাউকে সেখানে রাখা হয়, তাহলে বুঝবেন তার কি অবস্থা হয়,’ বলেন মারুফ জামান।
গুমের শিকার হয়েছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমীও। তাকেও দীর্ঘদিন থাকতে হয়েছিল আয়নাঘরে।
আযমী বলেন, ‘আদালত সবার বক্তব্য শুনে যেন সুবিচার করেন সেটাই আমি চাইবো।’
‘যার যতটুকু শাস্তি পাওয়ার সে যেন ততটুকু শাস্তি যায়,’ দাবি তার।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসিনুর রহমানও গুমের শিকার হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই আয়নাঘর আছে, এটি প্রকাশ করা হয় ২০২২ সালে।’
‘কেউ কোনো কথা বলেননি, কোনো জেনারেলও কথা বলেননি, উচিৎ ছিল। আজকে আমরা বিচার পাচ্ছি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া’, বলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
গুমের শিকার আইনজীবী সোহেল রানা বলেন, ‘এখানে কাউকে গুম করা হয়নি সামরিক অভ্যত্থানের কারণে, এখানে কাউকে গুম করা হয়নি গৃহযুদ্ধের আবহে। এখানে গুম করা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য।’
গুমের শিকার আইনজীবী ব্যারিস্টার আরমান বলেন, ‘ক্যান্টমেন্টের ভেতরে যে সাব জেল, সেখানে জেল কোড ফলো হচ্ছে কিনা, যাদেরকে আটক রাখা হয়েছে, তারা কি কোনোভাবে সার্ভিং সেনা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কিনা এটি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৭ বছরে গুম-খুনের শিকার হয়েছেন অসংখ্য ব্যক্তি। ক্ষমতাসীনদের মতের বাইরে গেলেই গুম করা হয় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে। বছরের পর বছর নির্জন বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। তাদের অনেকেরই আর খোঁজ মেলেনি।
তবে জুলাই অভ্যুত্থানে ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একে একে ছাড়া পান বিভিন্ন বাহিনীর হাতে গুমের শিকার আইনজীবী, সেনা কর্মকর্তাসহ ব্যক্তিরা।
গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলায় সাবেক ও বর্তমান ২৫ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৩২ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ সেনা কর্মকর্তা বর্তমানে সেনানিবাসের সাময়িক কারাগারে আছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন