এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে স্ত্রীকে দিয়ে মামলা করিয়ে আলোচনায় আসা এসআই মনিরুজ্জামানের অভিযোগটি ছিল মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মূলত, স্বামীকে বিভাগীয় শাস্তির হাত থেকে বাঁচাতে পুলিশের চেইন অব কমান্ড লঙ্ঘন করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনা গাইবান্ধা জেলায় ঘটেছে। পুলিশের সদরদপ্তর থেকে তদন্ত শুরু হলে মূল রহস্য বেরিয়ে আসে। মনিরুজ্জামান বর্তমানে জয়পুরহাটে কর্মরত রয়েছেন।
পুলিশের তদন্ত সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৫ মার্চ, গাইবান্ধা পুলিশ সুপারের নিকট লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানার বুড়িমারি গ্রামের তারিকুজ্জামান তুহিন অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি জানান, গাইবান্ধা সদর থানায় কর্মরত এসআই মনিরুজ্জামান বাংলা খবর ১৯৭১ নামের একটি ভুয়া পেজ খুলে তার নামে নানা ধরনের কুৎসা রটনা করছেন। এই কুৎসা রটনার কারণে পাটগ্রাম থানা পুলিশ তুহিনকে গ্রেফতারও করে। পরে তিনি মুক্তি পান।
উক্ত পেজ থেকে এসআই মনিরুজ্জামান পুলিশের বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও নানা ধরনের কুরুচিপূর্ণ লেখা প্রকাশ করেছেন।
অভিযোগের পর পুলিশ সুপার নিশাত এঞ্জেলা সদর থানার ওসি শাহিনুর ইসলামের মাধ্যমে মনিরুজ্জামানকে তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হওয়ায় তার মোবাইল (Oppo) ও ল্যাপটপ (Lenovo) জব্দ করা হয় এবং ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডি সদরদপ্তরে পাঠানো হয়।
এসআই মনিরুজ্জামানকে ২২ এপ্রিল ২০২৫ প্রশাসনিক কারণে পুলিশ সদরদপ্তরের এক আদেশে গাইবান্ধা জেলা থেকে রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করা হয় এবং পরবর্তীতে জয়পুরহাট জেলায় পদায়ন করা হয়।
এর দীর্ঘদিন পর, গত ২২ অক্টোবর, মনিরুজ্জামানের স্ত্রী কাজলি খাতুন গাইবান্ধা সদর আমলি আদালতে মোবাইল ও ল্যাপটপ আটকে রাখার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় এসপি, সদর থানার ওসি এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা তারিকুজ্জামানকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
পুলিশ সদরদপ্তরের এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা হলো, এসআই মনিরুজ্জামানের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল থেকে তিনি নানা ধরনের কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেন। পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত বিষয়ে পোস্ট করেছেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে এটি তার এখতিয়ার বহির্ভূত। ফরেনসিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তিনি স্ত্রীকে দিয়ে আদালতে এ ধরনের অভিযোগ করান।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার মোবাইল ও ল্যাপটপ কাউকে আটকে রাখা হয়নি। এগুলো তার সামনেই জব্দ করা হয় এবং ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়। সে নিজেকে বিভাগীয় শাস্তি থেকে বাঁচাতে এই কৌশল অবলম্বন করেছে।’
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ‘পুলিশের চেইন অব কমান্ড রয়েছে, কিন্তু মনিরুজ্জামান তা উপেক্ষা করেছেন। বরং নিজের রক্ষা করতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছেন। তার পূর্ববর্তী কর্মস্থলে রেকর্ডও ভালো নয়, একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দ্রুত তার বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে, জেলার পুলিশ সুপার এবং ওসির বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা গ্রহণের আগে আদালতের আরও অধিকতর বিবেচনার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছেন অনেকে।
পুলিশ সুপার নিশাত এঞ্জেলা বলেন, ‘যেহেতু পুলিশ সদরদপ্তর বিষয়টি দেখছে, তাই আমার নিজস্ব কোনো বক্তব্য নেই।’
সদর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘এসআই মনিরুজ্জামান এ কাজ করেছেন যাতে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয় বা শাস্তি থেকে বাঁচা যায়। এখন আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি দেখছেন এবং নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন