নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রণীত সাংবাদিকদের জন্য গণমাধ্যম আচরণবিধি বা নীতিমালা সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন আপত্তি ও প্রস্তাবের ভিত্তিতে কমিশন নীতিমালাটি পুনর্বিবেচনা করবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
রোববার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সিইসি এ কথা জানান। বৈঠকে ইসির সিনিয়র সচিবসহ কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)-এর চেয়ারম্যান রেজায়োনুল হক রাজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি যে গণমাধ্যম নীতিমালা তৈরি করেছে, তাতে কয়েকটি ধারা সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনা সভা আয়োজন করেছি, যেখানে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, সংবাদকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মত দিয়েছেন। সেই মতামতের ভিত্তিতে আমরা একটি সুপারিশমালা তৈরি করে নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দিয়েছি।’
তিনি জানান, বৈঠকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মূলত দুটি বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে—ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতা, কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট থাকার সীমা।
রেজায়োনুল হক রাজা বলেন, ‘আমরা বলেছি, সাংবাদিকদের জন্য আলাদা করে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ইস্যুকৃত পরিচয়পত্র আমাদের কাছে থাকে, তাহলে আমরা নির্দ্বিধায় কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারব। ১০ মিনিট থাকার সময়সীমাও অযৌক্তিক, কারণ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সংবাদ সংগ্রহে সময় ভিন্ন হতে পারে।’
তিনি আরও জানান, কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, ‘১০ মিনিটের নিয়ম’ কোনো কঠোর সময়সীমা নয়, বরং এটি একটি সাধারণ নির্দেশনা, যা ভোটকেন্দ্রের সীমিত জায়গা বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে। কমিশনের উদ্দেশ্য সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা সীমিত করা নয়, বরং সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন ভোট পরিবেশ বজায় রাখা।
সিইসি ও কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা বৈঠকে সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন যে, গণমাধ্যমের ভূমিকাকে ইসি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। এমনকি কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা না থাকলেও সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও উপস্থিতি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
রেজায়োনুল হক রাজা বলেন, ‘আমরা কমিশনকে বলেছি, সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি—যাতে সম্প্রচারের কারণে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনো বিঘ্ন না ঘটে। তবে যদি কোনো অনিয়ম, কেন্দ্র দখল বা সহিংসতার ঘটনা ঘটে, সেখানে সাংবাদিকদের সংবাদ পরিবেশনের স্বাধীনতা থাকতে হবে। এসব পরিস্থিতিতে কঠোর নীতিমালা প্রয়োগ করা যৌক্তিক নয়।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের দেওয়া সুপারিশগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং দ্রুত গণমাধ্যম আচরণবিধি সংশোধন করবে। এতে সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব আরও স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবেন, একই সঙ্গে জনগণের জানার অধিকারও আরও সুরক্ষিত হবে।
আরএফইডি (রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি)-এর সভাপতি কাজী জেবেল বলেন, ‘আমরা বৈঠকে জোর দিয়েছি যে, সাংবাদিকদের ওপর হামলা বা সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেওয়া হলে নীতিমালায় স্পষ্টভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা উল্লেখ থাকতে হবে। সাংবাদিক বা ক্যামেরাপারসনের ওপর হামলা হলে, দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই তাদের নিরাপত্তা ও কাজের স্বাধীনতা রক্ষায় ইসি যেন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, সেটাই আমাদের মূল দাবি।’
বৈঠকের সার্বিক পরিবেশ ছিল গঠনমূলক ও ইতিবাচক। সাংবাদিকদের প্রতিনিধি দল জানান, নির্বাচন কমিশন আন্তরিকভাবে সাংবাদিকদের মতামত শুনেছে এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।




