ঢাকা বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫

৩-৪ দিনের মধ্যেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত জানাবে সরকার

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:১৩ পিএম
আইন উপদেষ্টা ড. অধ্যাপক আসিফ নজরুল। ছবি- সংগৃহীত

আইন উপদেষ্টা ড. অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে ‘জাতীয় জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সকল রাজনৈতিক দল মেনে নেবে এবং দেশের স্বার্থে কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আইন সহায়তা প্রদান অধ্যাদেশ সংশোধনবিষয়ক মতবিনিময় সভার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি ।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে আমাদের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবেন—আমাদের সেই প্রত্যাশা ছিল। তবে আমরা শুধু প্রত্যাশা করেই বসে থাকিনি, নিজেদের মতো কাজ করেছি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে পরিষ্কারভাবে জানা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সব দলের প্রত্যাশা সমন্বয় করে দেশের এবং জনগণের স্বার্থে যা করা দরকার তা গ্রহণ করা হবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চাই, যে সিদ্ধান্ত হবে তা সব রাজনৈতিক দল গ্রহণ করবে এবং এটি দেশের প্রশাসন ও জনগণের জন্য কার্যকর হবে।’

মতবিনিময় সভায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পক্ষ থেকে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া উপস্থাপন করা হয়।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংস্থার কার্যপরিধি সম্প্রসারণ এবং আইনগত সহায়তা কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সংস্থাটিকে অধিদপ্তরে রূপান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এতে অধিদপ্তরের দায়িত্ব ও কার্যাবলি, আইনগত সহায়তা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন, মহানগর কমিটি গঠন, বেসরকারি সংস্থার কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ এবং মধ্যস্থতাকারীদের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট প্রদানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন: অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা, সাবেক জেলা জজ মোতাহার হোসেন, ব্লাস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল কনসালটেন্ট ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন প্রমুখ। সভায় আইনটির প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিভিন্ন দিক নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করা হয়।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের সংস্কার প্রক্রিয়া রাতারাতি সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। বড় ধরনের সংস্কার ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সবাই মনে করেন সব সংস্কার এখনই শেষ করা সম্ভব, কিন্তু বাস্তবে এত সহজ নয়। সংবিধানে কিছু লেখা থাকলেই তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে না। রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অভ্যাস পরিবর্তন না হলে কোনো কিছু কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হবে না।’

আসিফ নজরুল উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘সংবিধানে রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন লেখা আছে, কিন্তু বাস্তবে কখনো তা হয়নি। তিনি আরও জানান, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রায় ৭০-৮০ ভাগ প্রস্তাব ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকারের প্রতি আবেদন জানান, যাতে এই সংস্কারগুলো শক্তভাবে বজায় রাখা হয়।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের কিছুটা ভীতি আছে যে নির্বাচিত সরকার আসবে এবং এই সংস্কারগুলো বজায় রাখবে কি না। তাই আমরা নতুন সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, তারা আসলে এই সংস্কারগুলো ধরে রাখবেন এবং আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সব সংস্কার যেন সংবিধানে আটকে না থাকে। সংবিধান কোনো ম্যাজিক নয়। শুধু লিখে দিলে সমাধান হয়ে যাবে না। যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের আচরণ বদলানো না হয়, তবে কোনো সংস্কার বাস্তবায়ন কার্যকর হবে না।’

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত অন্যান্য অতিথিরা প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত পরামর্শ দেন এবং সংস্থার কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করার জন্য সুপারিশ করেন। সভায় আইন উপদেষ্টা এবং অন্যান্য অভিজ্ঞ আইনজ্ঞরা নিশ্চিত করেন যে, সব ধরনের পদক্ষেপ দেশের জনগণের স্বার্থে এবং ন্যায়সংগতভাবে নেওয়া হবে।