ঢাকা বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫

প্রেমের জেরে ক্যাম্পাসে হামলা, বন্ধ হলো কলেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ১২:৫৩ এএম

ময়মনসিংহ নগরের শম্ভুগঞ্জ জিকেপি কলেজের এক ছাত্রীকে পছন্দ করতেন ওই কলেজেরই দুই শিক্ষার্থী। এক ছাত্রীকে দুইজনেরই পছন্দ হওয়ায় বিরোধ তৈরি হয়। আর বিরোধের জের ধরেই গত সোমবার কলেজ ক্যাম্পাসে দফায় দফায় হামলা করে বহিরাগতরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে উত্তেজনা। বহিরাগতদের হামলায় আহত হন এক শিক্ষার্থী। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর বিকেলে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে পছন্দ করে দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী। একই মেয়েকে প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থীও পছন্দ করে। এ নিয়ে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে সোমবার সকাল ১০টার দিকে কলেজ চত্বরে বাগবিত-া হয়।  একপর্যায়ে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্পড় দেয়। এ সময় কলেজে মিটিং চলছিল। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে মিটিং শেষে বিষয়টি সালিশ করবেন বলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীকে একটি রুমে বসিয়ে রাখে।

এ সময় প্রথমবর্ষের ছাত্র মোবাইলে তার বন্ধু ও পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়। খবর পেয়ে তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কলেজে হামলা চালায়। পরে স্থানীয় নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। স্থানীয় নেতারা ও কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মীমাংসার একপর্যায়ে চলে যান। এ সময় শম্ভুগঞ্জ মোড়ের বিএনপি নেতা আজিজুল হক ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মী নিয়ে কলেজ গেটে উপস্থিত হন। আজিজুল হক কলেজের গেট খুলে দিতে বললে কলেজের পিয়ন গেট খুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় কলেজের ভেতরে উপস্থিত বিএনপিকর্মী স্বপন মিয়া গেটে গিয়ে আজিজুল হককে জানান, সবাইকে নিয়ে কলেজে ঢুকলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। আজিজুল হক একা কলেজে প্রবেশ করবেন বলে জানালে গেট খুলে দিলে তার সাথে লোকজন সবাই কলেজে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে এক শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এমন পরিস্থিতিতে কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

ময়মনসিংহ মহানগর যুবদলের সহসভাপতি আজিজুল হক বলেন, আমি ঘটনা শুনে মীমাংসা করার জন্য ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি বিএনপি নেতা কামাল হোসেনের ছোট ভাই স্বপন কলেজের ভেতরে তার লোকজন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় গেটে তালা লাগানো ছিল। আমি গেলে তালা খুলে দিলে কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করি। তবে আমার সাথে কোনো লোকজন ছিল না। প্রতিপক্ষের কিছু লোক গেট খুলে দিলে আমার সাথে প্রবেশ করে। এ সময় স্বপনের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। হামলার সময় এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ সময় কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম পুলিশ ফোর্স নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

কলেজের অধ্যক্ষ সুলতানা পারভীন বলেন, ‘কলেজে দফায় দফায় হামলার পর অজ্ঞান হয়ে যাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েই এসেছিলাম। পরে একটি পক্ষ আবারও হামলা করে। যে কারণে বিষয়টি বড় আকার ধারণ করে। তবে কারা হামলা করেছে, তাদের কাউকেই আমি চিনি না। কয়েক দিন পর পর কলেজে এভাবে হামলা করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হবে। আমরা আগামী দু-এক দিনের মধ্যে স্থানীয়দের সাথে বসে কথা বলে মীমাংসার চেষ্টা করব। যদি মীমাংসা না হয়, তাহলে আইনের সহায়তা নেব।’

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘এক মেয়েকে দুজন পছন্দ করেÑ এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে বিষয়টি অন্য পর্যায়ে চলে যায়। হামলার ঘটনায় একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’