ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল ঐতিহাসিক রায়

বাসস
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০৩:৫৯ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায়কে ঐতিহাসিক ও আজকের এই দিন দেশের মানুষের জন্য ঈদের দিন বলে উল্লেখ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়কে বাতিল করে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে রায় দেন। এই রায়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হয়।

বিএনপির আবেদনের পক্ষে শুনানি করা সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আজকের রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের এই দিন সারা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ঈদের দিন। সর্বসম্মতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ।’ তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ এখন স্বাধীনভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার কারণেই আজকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে এল।’

বিএনপির আবেদনের পক্ষে শুনানি করা সিনিয়র আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করেছিল। তারপর দেশের মানুষ আর ভোটাধিকারের সুযোগ পায়নি। ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল, দিনের ভোট রাতে হয়েছিল। আর বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের রায়টি তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রতিফলন ছিল, যা আমরা আইন-আদালতের ভাষায় গ্রহণ করতে পারিনি।

বদিউল আলম মজুমদারসহ চার আপিলকারীর পক্ষে শুনানি করা সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের রায়ে আদালত স্পষ্টভাবে বলেছেন, খায়রুল হকের নেতৃত্বে দেওয়া রায়টিকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে ত্রয়োদশ সংশোধনী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে ফিরে এল। আজকের রায়টি সামগ্রিকভাবে সময়ের পটভূমিতে ঐতিহাসিক। তিনি আরও বলেন, খায়রুল হকের নেতৃত্বে দেওয়া রায়টি ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল। রায়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লেখা হয়েছিল।

আজকের রায়ের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে এই মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে শুনানি করা সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়টি বর্তমানে কার্যকর হবে না। এটা কার্যকর হবে আগামীতে। অর্থাৎ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যকারিতা থাকবে না। চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে এটা কার্যকর হবে।

বহুল আলোচিত এই আপিলে বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।  জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে আপিল শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূইয়া। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। 

ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। এরপর ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলসংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক ও এক ব্যক্তি আবেদন করেন। সে রিভিউ আবেদন থেকে আপিল শুনানির জন্য গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর করে ২১ অক্টোবর আপিল শুনানির দিন ধার্য করেন।