বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান চলতি বছরও সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ১০ লাখ ১১ হাজার ৮৮২ জন জনশক্তি রপ্তানি করেছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) জানিয়েছে, গত ১১ মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক বৈদেশিক চাকরির উদ্দেশ্যে বিদেশে গেছেন। তুলনামূলকভাবে, ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ১১ হাজার ৮৫৬ জন এবং ২০২৩ সালে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪৫৩ জন।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৪৬ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। এ মাধ্যমে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদে বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতে একটি শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা শুধু কর্মসংস্থানেই নয়, রেমিট্যান্স আয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। ২০২৩ সালে প্রায় ২১,৯৪২.৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২৪ সালে প্রায় ২৬,৮৯০.০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৩.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠানো হয়েছে। এই অর্থ প্রবাহ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
যদিও কিছু ঐতিহ্যবাহী গন্তব্য যেমন মালয়েশিয়া সামান্য ব্যাহত হলেও, নতুন বৈদেশিক চাকরির বাজারের উদ্ভাবন এবং অন্যান্য দেশের শ্রমশক্তির চাহিদা বাংলাদেশকে জনশক্তি রপ্তানিতে ইতিবাচক অবস্থানে রাখছে।
এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের নভেম্বর মাসে একাই ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৩ জনকে কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি গতিশীল এবং ধারাবাহিক।
দেশের শ্রমিকেরা বর্তমানে সৌদি আরব, কাতার, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সৌদি আরবে ৬ লাখ ৭০ হাজার ৭৪৯ জন, কাতারে ১ লাখ ৪৩৯ জন এবং সিঙ্গাপুরে ৬৪ হাজার ৩২৬ জন বাংলাদেশি কর্মসংস্থান পেয়েছেন। সরকারি কর্মকর্তারা জানান, শুধু সংখ্যার বৃদ্ধি নয়, প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়েও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে।
সরকার বর্তমানে নতুন গন্তব্য যেমন রাশিয়া, ব্রুনাই এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে শ্রমিক পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে নার্স, চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের চাহিদা বিশ্বজুড়ে বাড়বে, তাই দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে আরও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
এছাড়া, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে এবং বিস্তৃত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে। প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে জাহাজ নির্মাণ প্রকৌশল, রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং, সাধারণ মেকানিক্স, বৈদ্যুতিক যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ, অটো ক্যাড ২ডি ও ৩ডি, ওয়েল্ডিং, ক্যাটারিং, রাজমিস্ত্রি এবং কোরিয়ান, আরবি ও জাপানি ভাষা শিক্ষা। এই প্রশিক্ষণগুলো নিশ্চিত করছে যে, বাংলাদেশি শ্রমিকরা বৈদেশিক চাকরির বাজারে দক্ষ এবং প্রতিযোগিতামূলক হবেন।
সরকার ইতিমধ্যেই বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতকে একটি ‘থ্রাস্ট সেক্টর’ ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের বিদেশে কর্মসংস্থান প্রসারিত করা, নতুন গন্তব্যে প্রবেশ সহজ করা এবং বৈদেশিক চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, নতুন গন্তব্যে শ্রমিক পাঠানো এবং প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি।



-20250916182550.webp)
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন