শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. আফজাল হোসেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৯:৫৯ পিএম

ডেঙ্গু এবং চৈতন্যহীন নগরবাসী

মো. আফজাল হোসেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৯:৫৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

পাটভাঙা শাড়ি পরে বাইরে বেরোবার সময় কাকের বিষ্ঠা গায়ে পড়লে খুব বিরক্ত হয়েছি অনেকবার। বেচারা পাখি তো আর বোঝে না। শিক্ষাদীক্ষা সামাজিক আচার-আচরণ কিছুই জানে না তারা। কিন্তু বাইরে বেরোবার সময় কোনো বাড়ির জানালা দিয়ে ফেলা নোংরা পানি বা পচা খাবার গায়ে পড়লে খুন চেপে যায় মাথায়। ঢাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকা নগরবাসী নিশ্চয় বয়াংসি প্রজাতির নয় যে, যত্রতত্র ময়লা ফেলবে। ধরেই নেই, তাদের কিছু শিক্ষাদীক্ষা আছে। কিছু বোধ বুদ্ধি বিবেচনা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা আছে। এই প্রত্যাশাই আমাকে ক্ষুব্ধ করে। যাদের এমন প্রত্যাশা নেই, তাদের সমস্যাও নেই। তারাও সমানে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে তরকারির খোসা, ময়লা জিনিস, পচাধচা খাবার ছাড়াও নানাবিধ বস্তু নিচে ফেলে। সেগুলো আরো পচে। দুর্গন্ধ ওঠে। মশা-মাছির আখড়া তৈরি হয়। অবাধে আপসে ছড়িয়ে পড়ে নানা রোগের জীবাণু। ডেঙ্গু মশার জন্ম লালন-পালন বৃদ্ধি এইসব জায়গাতেই হয়। আমরা, এই অর্বাচীন নগরবাসীরাই ব্যাবস্থাটা পাকা করি।

আজ পর্যন্ত ঢাকা নগরে আবর্জনা পরিষ্কারের স্বাস্থ্যসম্মত কোনো পরিকল্পনা নেই। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা উদোম থাকে নগরের ডাস্টবিনগুলো। লক্ষ-কোটি মশা-মাছি ভনভন করে ওড়ে সেখানে। সেখান থেকে যায় বাড়িতে বাড়িতে, দোকানে দোকানে। জীবাণু ছড়ায় মানুষের শরীরে শরীরে। নানা রোগে আক্রান্ত হয় বাচ্চা, জোয়ান ও বুড়ো সবাই। এই মশা-মাছির উপদ্রবে হেনো রোগ নেই যা ছড়ায় না। সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়। ডাক্তার বদ্যি কবিরাজের বাড়ি ছোটাছুটির শেষ থাকে না। সময় শরীর টাকার দেদার অপচয় তো হয়ই, জীবনের সুখ শান্তি পালিয়ে যায়। কারণ একটাই, আবর্জনা নিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনা। আর তারই কুৎসিত ফসল মশা-মাছি। বর্তমানে এডিস মশা। নগরীর দেখভাল করার জন্য আছেন মেয়র। এখন ঢাকা নগরী বিশালতার কারণে উত্তর-দক্ষিন দুই ভাগে বিভক্ত। দু’জন মেয়রের দায়িত্ব নগরীর পরিচ্ছন্নতা বিধান করা। শুধু ময়লা টানা গাড়ি দিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে ছড়াতে দিনে একবার (কোনো এলাকাতে প্রতিদিন যায় না ময়লার গাড়ি) ময়লা পরিষ্কার করলেই এই দায়িত্ব শেষ হয় না। নগরীর আনাচে-কানাচে, পাড়ায় পাড়ায়, বাড়ির আশপাশে কোথাও যেন ময়লা-আবর্জনা জমে না থাকে, সেদিকেও কড়া নজর রাখা জরুরি।

কর্পোরেশনের কর্মীবাহিনী দিয়ে প্রতিদিন অবস্থার তদারকি করাতে হয়। প্রতিদিন ছিটাতে হয় মশা নিধনের ওষুধ। কিন্তু হয় কি কাজগুলো?

ডেঙ্গু এখন বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়েছে। সবাই দারুণ উৎকণ্ঠিত আতঙ্কিত। অন্য সময় যেমন তেমন, এখন সবাই সোজা হয়ে বসেছেন।

অনুসন্ধিৎসু হয়ে জানতে চাইছেন, কি করে এমন হতে পারে? খোঁজ করা হয় কর্পোরেশনগুলোর মশা মারা কর্মসূচির। কি করেছে তারা, বা কি করছে তারা এই বিপদের দিনে? জানা গেল, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা মশা নিধনের ওষুধগুলো সব অকার্যকর। মশা মরে না তাতে।

বিজ্ঞ মেয়রেরা বলেছেন, তাই উত্তর সিটিতে মশা মারার ওষুধ দিলে কীটগুলো বহাল তবিয়তে দক্ষিণে পালায়। আবার দক্ষিণ সিটিতে ওষুধ ছিটালে মশাগুলো বহাল তবিয়তে উত্তরে পালায়। মেয়রদের কেউ যেন মাথার দিব্যি দিয়ে নিষেধ করেছে দুই সিটিতে একযোগে মশা মারার ওষুধ ছিটাতে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নগরবাসী শোকে-দুঃখে পাথর হয়ে এমন প্রহসনের বচন শোনে।

বর্তমানে ডেঙ্গু রোগের এই সর্বনাশা বিস্তারের প্রধান কারণ, এডিস মশা। এডিস মশার উৎপাতের কারণ, চৈতন্যহীন নগরবাসী এবং প্রচণ্ড দুর্নীতিবাজ কর্পোরেশন প্রশাসন। আমাদের ছেলেমেয়েরাও দেখেছে, সন্ধ্যে হলে ভোঁ ভোঁ শব্দ তুলে মশা মারার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। উদ্দেশ্য, ম্যালেরিয়া দমন। মোটামুটি কার্যকরই ছিল ওষুধগুলো। নাতি প্রজন্মে ভোঁ ভোঁ শব্দে মশার ওষুধ ছিটানো কমে গিয়েছিল। সেই তারা এখন বড়ও হয়েছে। নগর বড় হয়েছে অনেকটাই অপরিকল্পিতভাবে। কে কোথায় গাছ কাটছে, কে কোথায় গগনচুম্বী দালান তুলছে, কে পুকুর ভরাট করছে, কে নদীর পাড় দখল করছে ইত্যাদি নিয়ে মহাব্যস্ত মানুষ। তারা শুধু ‘চাই চাই, আরো চাই’ নিয়ে আছে। মশা মারার খবর নেয়ার সময় কই? সন্ধ্যে হলে বিশাল মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের বাড়িতে কয়েল জ্বলে। কারো বাড়ি নেট দিয়ে ঘেরা। ফ্যান ঘোরে। এসি চলে অনেকের বাসায়। ভেবেই নেয় মশা আর কি করবে? কি করতে পারে ক্ষুদ্র মশা, এবার দেখিয়ে দিচ্ছে।

আগেও মশার কেরামতিতে ডেঙ্গুর উৎপাত দেখেছি আমরা। সেটা ছিল সহনীয় পর্যায়ে। কিন্তু এইবার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। নগরীতে কয়েক কোটি মানুষের বাস এবং যাতায়াত। প্রাণের দায়ে সবাইকে যখন মশা নিধনের উপায় নিয়ে ভাবতে হবে, তখন রাজধানীতে দেখা যায় রঙ্গ তামাশা করে সিনেমার তারকারা ভাঁড় সেজে লম্বা ডাঁটের ঝাঁটা নিয়ে রাস্তা ঝাড়ু দেয়। হাস্যকর! ডেঙ্গু তাদের হয়নি বলে যে হবে না, এমন কথা কিন্তু নয়। মশা ঘিরে রেখেছে সমগ্র রাজধানী। কেউ বাদ নেই। তাছাড়া ঝাঁটার শৌখিন নাড়াচাড়া দিয়ে যে মশা নিধন সম্ভব না, এই ক্ষুদ্র বুদ্ধিও নেই তাদের মাথায়। তামাশা খেয়ে ফেলেছে সব। রোগে শোকে বিপন্ন মানুষের ভীষণ বিষণ সময়ে এ কেমন জঘন্য আচরণ? এদের শুধু অর্বাচীন বললে কম বলা হয়। যেটা বললে আসলটা বলা হয়, সেটা বলতে চাই না।

প্রশ্ন হলো, মশা বেড়ে যাওয়ার কারণ কি? নগরীর আনাচে-কানাচে জমে থাকা ময়লা ভেজা আবর্জনা একমাত্র কারণ। ফুলের টবে, ডাবের খোসায়, মটরের পরিত্যক্ত টায়ারে জমে থাকা পানি একেবারে নস্যি। পানি জমে থাকে নানা আকারের নর্দমা, ডোবা, পচা পানাপুকুর, এখানে ওখানে আটকে থাকা বৃষ্টির পানি, নির্মীয়মান ভবনের আশপাশের চৌবাচ্চায়, নগরীর শৌখিন লেকে। মশার পুণ্য জন্মস্থান ওইসব জায়গা।

কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ওইসব জায়গায় নিয়মিত মশা মারা ওষুধ দেয়া অনিবার্য কর্তব্য। তাদের নিজস্ব কর্মীবাহিনী আছে। নিজস্ব আইন আছে। সেটা খাটিয়েই কাজগুলো করতে হবে। পৌরবাসীদের উচিত সেই কাজের হিসাব রাখা।

আবর্জনা পরিষ্কারের ব্যাপারেও কর্পোরেশনের আইনি কিছু প্রচারণা থাকে। সেটা অমান্য করে নগরবাসী যেখানে-সেখানে ময়লা ফেললে দ- দিতে পারে কর্পোরেশন। তবে সে জন্য জোর নজরদারি থাকা আবশ্যিক। তা কি আছে? নগরবাসীরা কি সচেতন এই ব্যাপারে? বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে রাস্তার পাশে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা জমে থাকে, তা সরানোর জন্য একমাত্র কর্পোরেশনকে দায়ী করে চুপ করে থাকি আমরা। আজকাল হাতে হাতে স্মার্ট ফোন। তবু ফোন করে কেউ বিশেষ দফতরের লোক ডাকার কাজ করার সময় পান না। যাদের কাজ, তারা করে না। যাদের পরিষ্কার থাকার দায়, তারাও করেন না। ময়লা জমে থাকে। মশার বংশ বিস্তার হয়। কালে তাই ডেঙ্গুর মতো মহামারি ডেকে আনে। নগরবাসীর দায় এড়ানো যায় কি?

মশা নিধনের ওষুধ নিয়ে নগরবাসীর মাথায় চিন্তা থাকার কথা নয়। ওষুধ কিনবে কর্পোরেশন তার নিজের দায়িত্বে। তাদের চাকরিটাই এমন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে জনগণের রায় কিনে তাঁরা এই দায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাঁধে নিয়েছেন। নিজের টাকায় নয়, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় ওষুধ কেনা। সেই ওষুধ অকার্যকর হবে এটা কল্পনার অতীত। বহু অর্থ ব্যয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কিনে নগরবাসীকে ধোঁকা দেয়ার কোনো অধিকার নেই মেয়রদের। মশা মারার ভান করে এডিস মশা লালনেরও কোনো এখতিয়ার নেই মেয়রদের। মশা মারার ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে এমন নির্লজ্জ উলঙ্গ দুর্নীতি করার সাহস হয় কোথা থেকে? খবরগুলো যে, একেবারে গোপন থাকে তা নয়। পত্র-পত্রিকায় কিছু কিছু বেফাঁস খবর প্রকাশিত হয়। নগরে বুদ্ধিজীবী তো কম নেই। তারা শক্ত মতো লেখালেখি করতে পারেন। কৈফিয়ত চাইতে পারেন। ফেসবুকে দেখি, সুখের নহর বয়ে যায় মানুষের জীবনে। খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, বনভোজন, বিনোদন সন্ধ্যে, দেশ-বিদেশ ঘোরাফেরা, কত রকমের উদযাপনে পরম সুখেই দিন কাটছে। কে খোঁজ করে মশা মারা ওষুধের? ফলে যাদের কাজ করার কথা তারা নিশ্চিন্তে অকাজের ওপর বসে থাকে। জবাবদিহিতা নেই কোনোদিক থেকেই।

ডেঙ্গুর আক্রমণে এখন ১০ দিক খামচে ধরলেও সহজে নিস্তার নেই কারো। অন্যের দোষ দিয়ে লাভ নেই। গজব তো নাজিল হয়েছেই সঙ্গত কারণে। খুব ভালো করে জানি, ফাঁক আর ফাঁকি সৃষ্টি করেছি আমরাই, নগরবাসীরাই। মৃত্যুবীজ কিনেছি আমরাই। আর সেই অন্ধ অলস কর্মবিমুখ বিলাপ বিলাসী ডেঙ্গু আক্রান্ত দিশেহারা নগরবাসীদের নেতা মূলত মেয়ররাই। স্বাস্থ্য সমস্যার গোড়া কেটে রেখেছেন তারা। এখনো সময় আছে। হতাশা নয়, পরস্পরের প্রতি দোষারোপ নয়, বেহায়া বাক্যবাগীশগিরি নয়, যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে কর্মক্ষেত্রে এই মুহূর্ত থেকে। সর্বনাশা ডেঙ্গু প্রতিরোধ এবং প্রতিকার করতে হবে আমাদেরই। ফেরেশতা এসে কিছু করবে না।

আরবি/জেডআর

Shera Lather
Link copied!