১. ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষ ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলাকে ২৩টি জেলায় ভাগ করে প্রথম ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর পদ সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে ১৮২১ তাকে দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ক্ষমতা অর্পণ করা হয় ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট নামে আরেকটি পদ দেয় হয়। এটি জেলার সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট। জেলার উন্নয়ন কর্মসমূহের সমন্বয় সাধনের জন্য পাকিস্তান আমলে District Magistrate বা Collector এর জন্য ডেপুটি কমিশনার নামে আরো একটি পদ সৃষ্টি করা হয়। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হলে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এ পরিবর্তন সাধন করা হয়।
বিচারিক কাজের জন্য জেলা পর্যায়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু জেলার সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মূল দায়িত্ব পূর্বের ন্যায় ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের হাতেই অর্পিত রয়েছে এবং জেলার জনগণ এখনও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে তাদের সুখ দু:খের এবং আইনি সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ের জে.এম শাখা এ বিষয়ে জনগণকে সেবা দিয়ে থাকেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটগণ জেলা আইনশৃঙ্খলা ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি কমিটির সভাপতি। Magistrate শব্দটি ল্যাটিন Magi stratus শব্দ থেকে এসেছে যার মানে Administrator বা শাসক। ভারতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বাংলায় বলা হয় 'জেলা শাসক'।
'শাসক' শব্দটি সহনীয় করে বাংলাদেশে 'প্রশাসক' শব্দটি গ্রহণ করা হয়েছে। 'জেলা প্রশাসক' বহুল ব্যবহৃত District Magistrate শব্দের পরিবর্তিত বাংলা রূপ যা এখনো ভারতে জেলা শাসক নামে অভিহিত করা হয়। জেলা প্রশাসক জেলার প্রধান প্রশাসনিক ও রাজস্ব কর্মকর্তা। তিনি একাধারে জেলা প্রশাসক, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (District Magistrate), জেলা কালেক্টর (District Collector)ও ডেপুটি কমিশনার (Deputy Commissioner)। তিনি একইসাথে আইনশৃঙ্খলা, ভূমি প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সমন্বয় এবং সাধারণ ও স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। জেলা প্রশাসক জেলাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিনিধি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানমতে বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার হওয়ায় জেলা প্রশাসকগণ জেলাতে জাতীয় সরকারের প্রতিনিধি।
তিনি ঐ জেলার সবকিছুর জন্য জাতীয় সরকারের নিকট জবাবদিহি করেন। তিনি সরাসরি সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে যোগাযোগকারী ক্ষমতাপ্রাপ্ত জেলার একমাত্র কর্মকর্তা। ডিউটিজ অব চার্টার অনুযায়ী জেলা প্রশাসক জেলার বিভিন্ন দপ্তর সম্পর্কিত দুইশতাধিক (কম/বেশি) কমিটির সভাপতি। এসব কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। জেলা প্রশাসক জাতীয় সরকারের যাবতীয় কাজ জেলা পর্যায়ে করে থাকেন।
জেলায় অবস্থিত প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অফিস জেলা প্রশাসনের অংশ এবং জেলা প্রশাসকের সাধারণ নিয়ন্ত্রণে (General Control) কাজ করে থাকে। জেলা পর্যায়ে এনজিও বিষয়ে সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যবসা বাণিজ্য, চিকিৎসা, বিনোদন, শিক্ষা, বিজ্ঞান, কর্মসংস্থান, নারী ও শিশু, ধর্ম, পাঠাগার, দুর্যোগ ও ত্রাণ, কৃষি, প্রাণী, সার ও বীজ ইত্যাদি বিষয়ে সমন্বিত কাজ করেন। স্থানীয় পর্যায়ের সার্বিক অবস্থা সরকারকে অবহিত করেন, সমস্যার সমাধান প্রদান করেন। এই সংক্রান্ত সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সাধারণভাবে সকল দপ্তরের জন্য আবশ্যিক কর্তব্য। তিনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সরকারের নজরে নেন, জেলার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে প্রতি পরদিন অন্তর পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন FCR (Fortnight Confidential Report) সরকারের নিকট প্রেরণ করেন। তার সুপারিশে সরকার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
২. জেলা প্রশাসনের ব্যাপক এ বিশাল কর্মযজ্ঞের সিংহভাগ কাজ করেন অফিসের সহকারীগণ। অফিস কর্মপ্রণয়ন অনুযায়ী বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে প্রাপ্ত পত্রসমুহ অফিস সহকারীর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। পত্রের প্রেক্ষিতে কর্মকতার নির্দেশে তথ্য তত্ত্ব ও উপাত্ত তৈরির মাধ্যমে মতামতসহ নোট উপস্থাপন করেন অফিস সহকারীগণ। অফিস সহকারীগণ জেলা প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে বুদ্ধিমত্তা, মেধা, দক্ষতা ও বেশি শ্রম দিয়ে কাজ করেন। তাদেরকে জেলা প্রশাসনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে গিয়ে কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে জ্ঞানের পরিধিও বাড়াতে হয় এবং বিধি-বিধান নিয়ে প্রতিনিয়ত পড়তে হয়। জেলার
অগ্রগতি এবং ভাবমূর্তি বজায় রাখার নিমিত্তে প্রশাসনে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিষ্ঠা, দক্ষতা ও গতি দিয়ে কাজ করেন। সরকারের অন্যান্য দপ্তরের তুলনায় কাজের পরিধি, নোট উপস্থাপন, পত্র প্রস্তুতের ক্ষেত্রে ভাষার উৎকর্ষ ও বানান নির্ভুলতা, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে কর্মরত সহকারীগণকে পারদর্শিতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়। প্রশাসনের সহকারীগণের কাজের পরিধির সাথে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীন, বিভিন্ন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, করপোরেশন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কাজের মান গড়পড়তা হিসাবে মূল্যায়ন করা সমীচীন নয় কারণ প্রশাসনে সহকারীরা সুনামের সাথে প্রশাসন ক্যাডারের সাথে কাজ করে থাকেন।
৩. জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাজসমূহ কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটভিত্তিক হওয়ায় মুদ্রাক্ষরিক যন্ত্রের ব্যবহার নেই। মুদ্রাক্ষরিক এর ব্যবহার বিলুপ্ত হওয়ায় এবং অফিসে ই-নথি ব্যবস্থাপনা কার্যকর করতে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ০৫ মে, ২০১০ তারিখের ৯১ নং প্রজ্ঞাপনে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদটি অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে রুপান্তর করে কম্পিউটার পরিচালনার দক্ষতা পরীক্ষা নিয়ে ২টি কম্পিউটার টাইপিং ইনক্রিমেন্ট প্রদান করেন। পরবর্তীতে সহকারীগণ কম্পিউটার অপারেটর গ্রেড দাবি করলে ৯১ প্রজ্ঞাপন বাতিল করে পুনরায় অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক বহাল করায় সহকারীগণ কম্পিউটার অপারেটর গ্রেড হতে বঞ্চিত হন। অফিস সহকারীগণ কম্পিউটারের উপর পরীক্ষা দিয়ে দক্ষতা অর্জন করে কম্পিউটার অপারেটর পদ ও গ্রেড পেলনা বরং চাকরি জীবনে সবার পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় একই পদে ২৫-৩০ বছর চাকরি পর চাকির করে অবসরে যাচ্ছেন।
৩. প্রশাসন ক্যাডারগণ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ কেবিনেট সচিব হলেও অফিস সহকারীরা ১৬ নং গ্রেডে নিয়োগ পেয়ে ২৫-৩০ বছর চাকরি পর উচ্চমান সহকারী (বর্তমানে উপ-সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা) পদে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। এ পদোন্নতিতে আর্থিক সামাজিক ও পদ মর্যদা না থাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত অফিস সহকারীদের পদবি ও বেতন গ্রেডের দাবিতে বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস), ঢাকা কর্তৃক বিগত ডিসেম্বর ২০১৯ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কর্মরিবতীসহ বিভিন্ন কর্মসূচিসহ পালন করেছেন। বাকাসস এর দাবী যাচাই-বাছাই করে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় বিগত ৩১.০৩.২০২১ তারিখ ০৫.০০. ০০০০. ১১২. ১৫. ০০৯. ২১.১৩১ নং পত্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের ০৮টি পদ একত্রিত করে নিম্নোক্তভাবে পদ সৃজন করা হয়েছিল ( সংযুক্তি-০১) ।
ক্র:নং- পূর্বতন পদ - প্রস্তাবিত পদ - বেতন গ্রেড - মন্তব্য
১ . অফিস সুপারিনটেনডেন্ট | সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা | ১৩ তম | জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গৃহীত এ সিদ্ধান্ত অর্থ মন্ত্রনালয়ের আপত্তির কারণে বাস্তবায়ন হয়নি।
২ . সিএ-কাম- উচ্চমান সহকারী
৩ . সাঁট- লিপিকার- কাম- কম্পিউটার অপারেটর
৪ . পরিসংখ্যান সহকারী
৫ . সাটঁ মুদ্রাক্ষরিক -কাম- কম্পিউটার অপারেটর
৬ . প্রধান সহকারী
৭ . ট্রেজারী একাউন্টন্টেড
৮ . উচ্চমান সহকারী
অর্থ মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার মহোদয়ের জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় বর্নিত প্রস্তাব আপত্তি দিয়ে তারই নির্দেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়র বিগত ১৬ মে ২০২২ তারিখে ০৫.০০.০০০০.১১২. ১৫. ০০৯. ২১. ২০৬ নং পত্রে পূর্বে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের ০৮টি পদ তিনভাগে বিভক্ত করে নতুনভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করে।
ক্রনং- বর্তমান পদ- পরিবর্তিত পদ মন্তব্য
১ . অফিস সুপারিনটেনডেন্ট | উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা | অর্থ মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় বৈষম্য করে তিনটি সৃজন করা হয়।
২ . সিএ -কাম- উচ্চমান সহকারী
৩ . সাঁটলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর
১ . প্রধান সহকারী | সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা
২ . ট্র্রেজারী হিসাবরক্ষক
৩ . সাঁট মুদ্রাক্ষরিক-কাম-কমিপউটার অপারেটর
৪ . পরিসংখ্যান সহকারী
১ . উচ্চমান সহকারী | উপসহকারীপ্রশাসনিক কর্মকর্তা
জানা যায়, আবদুর রউফ তালুকদারের অনৈতিক প্রস্তাব পূরণ করতে না পারায় বেতন স্কেল অপরিবর্তিত রেখে একই দপ্তরে একই ধরণের কমের এ বিভাজন সৃষ্টি করে। ইতোমধ্যে বিভাজিত তিন পদের আলোকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১৩ মে ২০২৪ তারিখে সংশোধিত নিয়োগবিধিমালা প্রণয়ন করেছে। উক্ত নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন ফলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় জৈষ্ঠতা ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে আরো বৈষম্য জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
এ পরিস্থিতি নিরসনে বাকাসস উক্ত ৮ পদকে পূর্বের ন্যায় একপদে অপরিবর্র্তিত রাখার জন্য ইতোরপূর্বে সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ সচিবারয়, ঢাকা। আবেদন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
ক) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৩১.০৩.২০২১ তারিখের ০৫.০০.০০০০.১১২.১৫.০০৯.২১.১৩১ স্মারক অনুযায়ী ৮টি পদ একত্রিত করে “সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা” নামে একটি পদে রূপান্তর পত্রের প্রজ্ঞাপন জারি করা অথবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত ১৬ মে ২০২২ তারিখের ০৫.০০.০০০০.১১২.১৫.০০৯.২১.২০৬ নং প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সৃজিত ৩টি পদ (উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও উপসহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা) একত্রিত ০১টি পদ একত্রিত করে “সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা”পদে রুপান্তর করার জন্য অনুরোধ করা হলো ।
(খ) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ০৫ মে ২০১০ তারিখের ০৫.১৫১.০২২.০০.০০১.২০০৯.৯১ নম্বর স্মারকের আদেশ মোতাবেক অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদকে অফিস সহকারী- কাম- কম্পিউটার অপারেটর করে পূর্বের আদেশ বহাল রাখার জন্য বিনীত প্রার্থনা করছি।
এস.এম. আরিফ হোসেন
সভাপতি/ আহবায়ক
বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস)
কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা
মোবাইল নাম্বার-০১৭১৫-১৮৯৩৯৮
বিনীত নিবেদক
মোহাম্মদ আশ্রাফুল ইসলাম
মহাসচিব/সদস্য সচিব
বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস)
কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা
মোবাইল নাম্বার- ০১৯২২৫৫৩৩৬৪