ঢাকা শনিবার, ০৩ মে, ২০২৫

নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ ৪ দাবিতে হেফাজতের মহাসমাবেশ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২, ২০২৫, ১১:২৮ এএম
৩ মে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে হেফাজতে ইসলাম ছবি: সংগৃহীত

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ‘শাপলা চত্বরে গণহত্যা’র বিচার এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম নিপীড়ন বন্ধের দাবি- এ চার দফা দাবিতে আগামীকাল ঢাকায় মহাসমাবেশ করতে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

শনিবার (৩ মে) সারা দেশজুড়ে কর্মী-সমর্থকদের সমাবেশে নিয়ে আসতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাদরাসা কেন্দ্রিক সফর করেছেন। রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।

এই কর্মসূচির পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল গত রমজানে। তখন ঢাকায় এক বৈঠকে হেফাজতের শীর্ষ নেতারা সরকারের কাছে মামলা প্রত্যাহার এবং ২০১৩ সালের ‘শাপলা চত্বরে’ নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের বিচার দাবি করার সিদ্ধান্ত নেন।

তবে, এপ্রিলের শেষদিকে নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের পর বিষয়টি ঘোলাটে হয় এবং হেফাজতের অবস্থান আরও কঠোর হয়ে ওঠে। মহাসমাবেশের প্রথম দাবি হিসেবে এখন শীর্ষে উঠে এসেছে সেই কমিশন ও তার প্রতিবেদন সম্পূর্ণ বাতিল করার বিষয়টি।

কী আছে সেই রিপোর্টে?

নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনটিতে রয়েছে:

# উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষ সমান অধিকার
# বহুবিবাহ নিষিদ্ধকরণ
# যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি
# নারী-পুরুষের সমান নাগরিক অধিকার

হেফাজতের নেতাদের ভাষ্য, এসব প্রস্তাব ইসলামবিরোধী ও কোরআনের বিধানের পরিপন্থী। বিশেষত উত্তরাধিকার সংক্রান্ত পরিবর্তন ও বহুবিবাহ রোধ সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলোতে তারা ‘ধর্মহীনতার সুগন্ধ’ পাচ্ছেন।

কমিশনই বাতিল করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ‘ছেলেকে দ্বিগুণ আর মেয়েকে অর্ধেক সম্পত্তি দেওয়ার কোরআনসম্মত বিধানকে বাতিল করার কথা বলছে এই কমিশন। তারা পতিতাবৃত্তিকে শ্রম হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বলছে। ইসলামে যেটা নিষিদ্ধ, তারা সেটার স্বীকৃতি চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা কেবল প্রতিবেদন নয়, ইসলামকে খারিজ করে দেওয়ার একটা প্রয়াস। তাই শুধু প্রতিবেদন নয়, পুরো কমিশনই বাতিল করতে হবে।’

‘আমরা কোনো ভীতি ছড়াচ্ছি না’

কর্মসূচির মাধ্যমে হুমকি বা আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ নাকচ করে হেফাজত নেতারা বলেন, ‘আসলে আতঙ্ক তো মুসলমানদের মধ্যেই তৈরি হয়েছে, কমিশনের সুপারিশ দেখে।’

তারা অভিযোগ করেন, ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষদের প্রতিনিধি রেখে কমিশন গঠন করা হয়নি। এতে গোটা উদ্যোগটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করছেন তারা।

কমিশনের প্রতিক্রিয়া

কমিশনের সদস্য ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, ‘আমরা কারও ওপর কোনো আইন চাপিয়ে দিচ্ছি না। আমরা শুধু একটি সিভিল ল-এর কথা বলেছি, যেটা ঐচ্ছিক হবে। কেউ চাইলে ধর্মীয় আইন অনুসরণ করতেই পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একাডেমিক আলোচনার মাধ্যমে সমাজে সচেতনতা আনতে চাই। কিন্তু আমাদের বিরোধিতা যেন একরকম মানসিক চাপ ও উগ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে।’

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: নির্বাচন সামনে, চাপের কৌশল?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন সামনে রেখে হেফাজতের এই কর্মসূচি সরকারকে চাপ দেওয়ার কৌশল হিসেবেই দেখা হচ্ছে। মামলাগুলো এখনও নিষ্পত্তি না হওয়ায় নির্বাচনের পরে নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে তা রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের আশঙ্কা করছে সংগঠনটি।

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘সরকার তো অনেকের দাবি মানছে, তাহলে আমাদের দাবি মানতে সমস্যা কোথায়?’