দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের দাবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে শনিবার (১২ জুলাই) ছড়ানো হয়েছে একাধিক ভিডিও। ভিডিওগুলোতে দাবি করা হয়—ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, ঝিনাইদহ, রূপগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ, এনসিপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বিএনপির অফিস লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
তবে এসব ভিডিওর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফ্যাক্টচেক প্ল্যাটফর্ম ডিসমিসল্যাব জানায়, অধিকাংশ ভিডিওই পুরোনো এবং ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ধারণকৃত। যাচাই করে দেখা গেছে, ভিডিওগুলোর সাম্প্রতিক ঘটনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
কুমিল্লা
এক ভিডিওতে দাবি করা হয়, কুমিল্লায় এনসিপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বিএনপি অফিসে আগুন দিয়েছে। ডিসমিসল্যাবের তথ্যমতে, এটি ২০২৫ সালের ১৭ মে কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকায় নিজ দলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের ভিডিও, যেখানে তারা নিজেরাই দক্ষিণ জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে আগুন দিয়েছিল। সময় টিভির ১৮ মে’র একটি প্রতিবেদনে এই ভিডিওর ক্লিপস পাওয়া গেছে।
এই একই ভিডিও আবার ঢাকার মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে ‘সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া’ বলেও ছড়ানো হয়—যা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বিভ্রান্তিকর।
ঝিনাইদহ
এক ভিডিওতে বলা হয়, কালীগঞ্জে জামায়াত-শিবির বিএনপি অফিসে হামলা চালিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় একটি আওয়ামী লীগপন্থী গোষ্ঠীর হামলার ভিডিও। বিএনপির অফিসে কোনো ক্ষতির চিহ্ন নেই।
যশোর
যশোরের একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, বিএনপির অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিসমিসল্যাব জানায়, এটি ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর লালমনিরহাটে বিএনপি নেতা আসাদুল হাবিব দুলুর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলার ভিডিও। ‘লালমনি পোস্’ নামক একটি পত্রিকার ইউটিউব চ্যানেল এবং একাধিক গণমাধ্যম প্রতিবেদনেও এর সত্যতা পাওয়া যায়।
ঢাকার খিলক্ষেত
এখানে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, সাধারণ মানুষ বিএনপির অফিস ভেঙে দিয়েছে। বাস্তবে এটি ছিল ২০২৫ সালের ২৬ জুন যৌথবাহিনীর পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানের ভিডিও, যা খিলক্ষেত রেলগেট এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ
রূপগঞ্জে বিএনপি অফিসে আগুন লাগার একটি ভিডিও ‘মুক্তিবাহিনী’ নামক একটি ফেসবুক পেজে ছড়ানো হয়। ভিডিওটি যাচাই করে দেখা যায়, এটি একাত্তর টিভির ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবরের একটি প্রতিবেদনের ফুটেজ।
৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এই প্রেক্ষাপটে ‘সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’ দাবি করে যেসব ভিডিও ছড়ানো হয়, ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধানে সেগুলো বিভ্রান্তিকর, পুরোনো এবং মনগড়া প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত বলে প্রমাণিত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :