বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সমাজের যারা ভালো মানুষ—একজন সৎ কৃষক, একজন সৎ চিকিৎসক, একজন শিক্ষক—সবারই এ দলে নতুন সদস্য হওয়ার সুযোগ আছে। তবে কোনো চাঁদাবাজ বা দখলদার বিএনপির সদস্য হতে পারবে না।’
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে ঢাকার ধামরাইয়ে বিএনপির এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নতুন সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন কর্মসূচি এবং জিয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অশালীন প্রচারণার প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘সামনে আমাদের কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। জুলাইয়ের পর মানুষ যে আস্থা নিয়ে পথ চলতে চেয়েছিল, যারা স্বাধীনভাবে চলতে চায়, তাদের জন্য কঠিন অবস্থা তৈরি হয়েছে। যারা দীর্ঘ ১৬ বছর রাজপথে ছিল—হাসিনা সরকার তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে, স্ত্রী-সন্তানদের কাছে থাকতে দেয়নি। হাসিনার শাসনামল ছিল গুম-খুনের আমল—১৬ বছরের শাসন ছিল হায়েনার শাসন।’
তিনি বলেন, ‘যারা দেশ ও গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলত তাদের লাশ পাওয়া যেত বুড়িগঙ্গা বা শীতলক্ষ্যা নদীতে। বাকশালী সরকার কারও কোনো স্বাধীনতা দেয়নি। হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের জন্য রিকশাচালক, দিনমজুর, ছাত্র-জনতা, এমনকি নিষ্পাপ শিশুরাও পর্যন্ত মাঠে নেমেছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শত শত ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অবুঝ শিশুও বাদ পড়েনি—প্রাইমারি স্কুল ও হাইস্কুলের ছাত্রদের পর্যন্ত গুলি করে মারা হয়েছে। আমরা আবু সাইদ, মুগ্ধ, চট্টগ্রামের ওয়াসিম আকরামের মতো দেশপ্রেমিকদের ভুলে যেতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজপথে যারা শহীদ হয়েছে, তাদের হত্যা করা হয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের নির্দেশে। সাধারণ জনগণের ওপর গুলি চালাতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এই নির্দেশের কল রেকর্ড ফেসবুকে প্রকাশ হয়েছে। এটি কোনো এডিট করা রেকর্ড নয়, বিবিসির জরিপেও তা উঠে এসেছে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এক ফ্যাসিবাদকে আন্দোলনের মাধ্যমে বিতাড়িত করা হয়েছে, অথচ আরেক ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়েছে। জামাত-এনসিপি চায় দেশে যেন কোনো নির্বাচন না হয়—তারা চায় আরও ৪-৫ বছর নির্বাচন ছাড়াই দেশ চলুক। কিন্তু নির্বাচন না হলে দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করা সম্ভব নয়। জনগণ তাদের আস্থা হারাবে। আমরা বর্তমান সরকারকে সমর্থন করি—তারা যেন প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেয় এবং জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়।’
বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যে জেলখানা সরকারিভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছিল। বিনা কারণে তাকে ছয় বছর কারাগারে আটকে রেখেছিল হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার। কারাগারে তিনি অসুস্থ হলে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ চাওয়া হলেও হাসিনা সরকার কোনো সুযোগ দেয়নি। গুম-খুনই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।’
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে রিজভী বলেন, ‘‘এই দেশের সংবিধানে ‘আল্লাহ’র নাম সংযুক্ত করেছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। তিনিই সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ যুক্ত করেছিলেন।’’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব তমিজ উদ্দিন। প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার আবু আশফাক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতিকুজ্জামান স্বপন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কমিটির সদস্য গোলাম মওলা শাহীন ও মুশফিকুর রহমান লেলিন, ধামরাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম এবং পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতিকুর রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সকল নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।