ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

জুলাই-পরবর্তী রাজনীতির মাঠে নতুন খেলোয়াড়ে পুরাতন খেলা

সানজিদা আফরিন সোনিয়া
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ১০:৩৩ পিএম
বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির লোগো। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে জুলাই-পরবর্তী রাজনৈতিক সমীকরণ। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহানুভূতি, আর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে বিএনপির পদচারণা—সব মিলিয়ে রাজনৈতিক পেন্ডুলাম এখন দুলছে ভিন্ন ধারায়। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি দিয়েছে, যাতে আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এই সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে—হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), সিভিকাস, ফোরটিফাই রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।

এই চিঠির প্রতিলিপি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রিন্ট লিফলেটের মতো বিলি করছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে দলটিকে পুনরায় বৈধতা দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে।

এদিকে, বিএনপি বলছে, তারা আওয়ামী লীগ বা কোনো দলকে নিষিদ্ধ দেখতে চায় না। একই সঙ্গে ৭১ ও ২৪-এর ঘটনাকে এক পাল্লায় না মাপার কথাও বলছে তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব অবস্থান একদিকে মানবাধিকার সংগঠনের বক্তব্যের সঙ্গে মিল রাখছে, আবার অন্যদিকে বিএনপির কৌশলগত অবস্থান বদলের ইঙ্গিতও দিচ্ছে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক অঙ্গনে নীরব অগ্রযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। পিআর বা সংখ্যানুপাতে প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন, জুলাই সনদকে আইনি স্বীকৃতি দিতে গণভোটসহ ৫ দফা দাবি সামনে এনে সমমনা ৭টি দলের সঙ্গে জোট গড়েছে দলটি। অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে—কিছু প্রগতিশীল দলও এই সমীকরণে রয়েছে জামায়াতের পাশে।

রাজনৈতিক সহিংসতার চিত্রে বিএনপির কর্মকাণ্ড অনেক ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগের পূর্বের ভূমিকার ছায়া মনে করিয়ে দিচ্ছে। ফরিদপুরে এ কে আজাদের ওপর হামলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জোনায়েদ সাকির ওপর হামলা, নুরুল হক নুর এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার ওপর হামলার ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগ বিরোধী কর্মীদের মধ্যেই অসহিষ্ণুতা ও বিভাজন সৃষ্টি করছে। এসব ঘটনায় বিএনপি কার্যকর প্রতিকার দিতে পারছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে রাজনৈতিক চক্রান্ত ও দমন-পীড়নের শিকার হয়ে ‘জুলাই যোদ্ধারা’ এখন নানাভাবে ব্যাকফুটে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদের এলডি হলে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তারা ১৭ অক্টোবরের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে চারটি মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

আর জুলাই সনদের ফ্রন্টলাইনে যাদের থাকার কথা সেই এনসিপিই সনদ থেকে দূরে থাকল। করল না স্বাক্ষর, এমনকি অনুষ্ঠানেও যায়নি তারা। বলছে, বাস্তবায়ন পদ্ধতির উল্লেখ ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।

গুরুতর নানা অভিযোগ তুলে তারা বলছে, বিএনপি, জামায়াত, আমলা, সেনাবাহিনী যে যার মতো জুলাইর সঙ্গে গাদ্দারি করে ফায়দা লুটছে। শুধু তাই নয়, ঐকমত্য কমিশনও  যন্ত্রণায় রয়েছে বলে মন্তব্য করছেন।

রাজনীতির এই খেলার মাঠে এখন ‘খেলোয়াড়’ বদলেছে ঠিকই, কিন্তু ‘খেলা’ বদলায়নি। রাজনৈতিক আঙিনায় বিএনপির উত্থান, আওয়ামী লীগের প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি এবং জামায়াতের কৌশলগত পুনরুৎ্থান—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সামনে এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক মেরুকরণের দিকে এগোচ্ছে।

ফলে প্রশ্ন উঠছে, কার হাতে থাকবে দেশের ‘সিন্দুকের চাবি’?