২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শুরু হয় অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া। সেদিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের।
পরে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন।
এই সরকারে বর্ষপূর্তি হবে এক সপ্তাহ পরই। এরই মধ্যে জাতীয় সরকার হওয়া না হওয়া নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, ‘ছাত্ররা আমাদের জাতীয় সরকারের প্রস্তাব দেয়নি।’ এরপরই শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও এনসিপির আহ্বায়ক বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন এবং মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য সত্য নয় বলেও তিনি পোস্টে উল্লেখ করেন।
পোস্টে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন জাতীয় সরকারের কোনো প্রস্তাবনা ছাত্রদের পক্ষ থেকে তাদের দেওয়া হয় নাই। তারা অন্য মাধ্যমে এ প্রস্তাবনা পেয়েছিল। এই বক্তব্যটি সত্য নয়। ৫ আগস্ট রাতের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলাম আমরা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার করতে চাই। সেই প্রেস ব্রিফিংয়ের পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আমাদের ভার্চুয়াল মিটিং হয়, সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।’
তিনি লেখেন, ‘তারেক রহমান এ প্রস্তাবে সম্মত হননি এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের দিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাজেশন দেন। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা বলি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে।’
‘৭ আগস্ট ভোরবেলা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বাসায় আমরা ওনার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আলোচনা করি। উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেওয়ার আগে তারেক রহমানের সঙ্গে আরেকটি মিটিং এ প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ নিয়ে আলোচনা/পর্যালোচনা হয়।’
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুলাই দেশের প্রথম সারির একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর জাতীয় সরকার হলে ৭ দিনও টিকত না’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সাক্ষাৎকারে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের যে অভিজ্ঞতা; যে সময়ে মুহূর্তে মুহূর্তে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সেই সময়ে যদি আমরা একটা ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট করি, আমি এখনো বলছি, আমরা ওই গভর্নমেন্টকে সাত দিনও টেকাতে পারতাম না। প্রত্যেকে একেক মন নিয়ে থাকত, ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট টিকত না।’
তিনি বলেন, ‘(বৈষম্যবিরোধী) ছাত্রদের নেতাদের সঙ্গে ওই ৫ আগস্টের পর, জাস্ট ওই দিনই বা তার পরের দিন আমাদের কোনো দেখাই হয়নি। আমাদের কাছে এই প্রস্তাব আসেইনি। এই প্রস্তাবটা ছাত্রদের কাছ থেকে আসেনি, অন্য মহল থেকে আসতে পারে। কিন্তু ছাত্রদের কাছ থেকে এই প্রস্তাব আসেনি জাতীয় সরকার তৈরি করার।’
আপনার মতামত লিখুন :