সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের অবস্থান পুনঃসংহত করতে এবং নির্বাচনি মাঠে প্রভাব বিস্তারে ঘরোয়া পর্যায়ে ‘ডোর টু ডোর’ কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনের আগেই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন এবং সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতারা।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের প্রাক্কালে জামায়াতে ইসলামী ও অন্য ইসলামপন্থি দলগুলোর যুগপৎ কর্মসূচি এবং বিএনপির বিরুদ্ধে চলমান প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে মাঠে সক্রিয় হওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য- জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে ভোটাধিকার, নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কারের বার্তা পৌঁছানো।
‘মাঠে রাজনৈতিক জবাব দেওয়া হবে’
বিএনপি মনে করছে, ইসলামী দলগুলোর চলমান কর্মসূচি রাজনৈতিক চাপ তৈরির একটি কৌশল হলেও তা নির্বাচনি গড়নে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে না। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে কর্মসূচির পেছনের উদ্দেশ্য যদি বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়, তাহলে বিএনপি এর রাজনৈতিক জবাব দেবে মাঠ থেকেই।’
একই সুরে কথা বলেছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। অন্যদের কর্মসূচিতে আমরা বাধা দিই না। তবে এসব কর্মসূচির স্থায়িত্ব কম এবং সব দলই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে- এটাই বাস্তবতা।’
নির্বাচনমুখী পরিকল্পনায় ‘নারী’ ফ্যাক্টর
‘ডোর টু ডোর’ কর্মসূচিকে কেবল প্রচার নয়, সরাসরি জনসম্পৃক্ত রাজনীতির অংশ হিসেবে দেখছে বিএনপি। এ কর্মসূচিতে পুরুষ কর্মীদের পাশাপাশি নারীদেরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনকে ঘিরে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো দলের ইমেজ পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।
দলের একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, ‘আমরা চাই জনগণের কাছে ব্যাখ্যা দিতে- কেন আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন দরকার, কেন বিলম্ব মানে ভোটাধিকার বিলম্ব। এই ভোটের জন্য আমরা এক যুগেরও বেশি সময় আন্দোলন করেছি।’
৩১ দফার ভিত্তিতে নির্বাচনি ইশতেহার
বৈঠকে বিএনপির ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফার আলোকে নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আসন্ন নির্বাচনে প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী দেবে বিএনপি।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সম্ভাব্য প্রার্থীদের আগেভাগে মাঠে থাকার এবং দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। দলের এক নেতা বলেন, ‘আমরা দেখেছি, আগের কিছু নেতার কর্মকাণ্ডে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। এখন আমরা সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠেছি। শৃঙ্খলা ফিরেছে।’
ঐকমত্য কমিশন ও জুলাই সনদ
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, যেসব সংস্কার সংবিধান সংশোধনের বাইরে, সেগুলো নির্বাহী আদেশ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন সম্ভব। আর যেগুলো সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজন, তা নির্বাচনের পরবর্তী সংসদ করবে।
দলীয় নেতারা মনে করেন, এই সংস্কার প্রস্তাবনার আইনি ভিত্তি সুদৃঢ় করতে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।
বিশ্লেষকদের চোখে বিএনপির কৌশল
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি এখন এক ধরনের ‘নির্বাচনি রিকভারি মোড’-এ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনমুখী কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক মাঠে নিজেদের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে চাইছে। তবে অন্যান্য দলের সঙ্গে বিরোধ না বাড়িয়ে ঐক্যমুখী থাকা এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
অন্যদিকে বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, ‘ইসলামী দলগুলোর কর্মসূচি যতই চাপ প্রয়োগের কৌশল হোক, বিএনপি যদি জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে পারে, তবেই তারা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে।’
        
                            
                                    
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
                                    
                                    
                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                            
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন