নানা মহল ও কিছু রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ‘সেটেল্ড ইস্যু’ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ ছড়ানোর চেষ্টা করছে, এমন অভিযোগ তুলে আগামীকালের মধ্যেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন।
ড. তাহের বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আংশিক বক্তব্য ও মনগড়া তথ্য ছড়িয়ে জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় কি না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, জামায়াতে ইসলামী জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই আইনগত ভিত্তিতে। কমিশনের সুপারিশের আলোকে অবিলম্বে একটি বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। আমরা চাই, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট হোক, আর সেই গণভোটের ফলাফলের ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।’
জামায়াত নেতা বলেন, ‘ড. ইউনূসের প্রতি আমাদের অনুরোধ—আজকের মধ্যেই যদি আদেশ জারি করা সম্ভব হয়, সেটি হবে সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ। প্রয়োজনে রাত ১২টা বা ১টায়ও আদেশ জারি করা যায়—এর নজির দেশে আছে। কিন্তু যদি আজ না হয়, আগামীকাল অবশ্যই করতে হবে। বিলম্ব হলে তা জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে, এবং এর দায় নিতে হবে সরকার ও যারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন তাদের।’
ড. তাহের বলেন, ‘এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনটি সুস্পষ্ট অঙ্গীকারের একটি ছিল রাজনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে যেভাবে সংস্কারের প্রস্তাবনা তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। ‘যদি এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়, তবে বাংলাদেশ নতুন দিগন্তে প্রবেশ করবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা।’
তিনি জানান, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সক্রিয়ভাবে ৩১টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। দীর্ঘ আলোচনার পর অনেক বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব হয়েছে। ‘শেষ পর্যন্ত এনসিপি ছাড়া সব দলই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে। বিএনপি ও জামায়াতও পাশাপাশি স্বাক্ষর করেছে। কমিশনের প্রস্তাবগুলোর প্রায় ৬০-৬৫টি বিষয়ে শতভাগ ঐকমত্য ছিল, আর কিছু বিষয়ে ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত একমত হয়েছি,’ তিনি উল্লেখ করেন।
ড. তাহের বলেন, ‘কিছু দলের নেতা দাবি করছেন, ঐকমত্য কমিশন নাকি একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বাস্তবতার পরিপন্থী। কমিশনের আলোচনায় শুধুমাত্র কমিশনের প্রস্তাবনাই ছিল, কোনো দলের নিজস্ব এজেন্ডা নয়।’
তিনি বলেন, ‘যেসব পয়েন্টে ভিন্নমত প্রকাশ হয়েছে সেগুলো গণভোটে পাঠানোর দাবি অবাস্তব ও অযৌক্তিক। যদি প্রতিটি পয়েন্টে গণভোট করতে হয়, তবে প্রতিদিনই গণভোট আয়োজন করতে হবে। বাস্তবে সব দলেরই কিছু বিষয়ে মতভেদ থাকে। তাই এসব কথা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য বলা হচ্ছে।’
তাহের আরও বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন। যারা এই সিদ্ধান্তকে প্রতারণা বলছে, তারা আসলে জনগণের ইচ্ছা ও চিন্তার পরিপন্থী অবস্থান নিয়েছে।’
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করি যেন রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা ও উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি না হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া বজায় রাখা জরুরি। পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটলে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
ড. তাহের বলেন, ‘গণভোট হচ্ছে জুলাই সনদের সংস্কারকে বৈধতা দেওয়ার জন্য, আর জাতীয় নির্বাচন হলো সরকার গঠনের জন্য। এই দুটি ভিন্ন প্রক্রিয়াকে গুলিয়ে ফেলা যাবে না। আমরা চাই, দুটি প্রক্রিয়া আলাদা ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হোক, যেন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি সরকার সময়ক্ষেপণ করে শেষ মুহূর্তে বলে ‘সময় নেই’, তবে সেটি হবে রাজনৈতিক প্রতারণা ও কৌশলগত বিলম্বের মাধ্যমে অনিশ্চয়তা তৈরির ষড়যন্ত্র।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, ড. এইচ. এম. হামিদুর রহমান আজাদ এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ।





সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন